দেশবিদেশ রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ০৯ অক্টোবর ২০১৮
টেকনাফে জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মীদেয় নিয়ে উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সংবর্ধনা নেয়ার প্রতিবাদে অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের দাবি, টেকনাফ কলেজ জাতীয়করণে কলেজ প্রশাসন এমপি বদির নির্দেশে এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। কিন্তু সংবর্ধনার নামে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী সুযোগ সন্ধানীদের এমপি বদির অতিথি বহরে স্থান দেয়ায় তারা এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন।
গতকাল সোমবার বেলা ৩ টায় কলেজ মিলনায়তনে এই সংবর্ধনার আয়োজন ছিল। সংবর্ধনা শুরুর আগেই এমপি বদির সাথে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতি লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দরা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দেন। ছাত্রলীগের এই ঘোষণায় একাত্মতা প্রকাশ করে উপস্থিত শিক্ষার্থীরাও অনুষ্ঠান বয়কট করে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
টেকনাফ কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ কলেজ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে ছিল কলেজ জাতীয়করণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং সরকারের আরো উন্নয়ন চিত্র প্রচার করার। কিন্তু এমপি বদি কলেজ প্রশাসনের সাজানো সূচি পরিবর্তন করে নিজের মতো করে একটি সূচি দেন এবং আমন্ত্রিত জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের মূলত এমপি বদির অনুরোধে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।’তিনি আরো বলেন, ‘ কলেজের সভাপতি সাংসদ নিজেই। তাই কলেজের যেকোন অনুষ্ঠান আয়োজন তিনি তার মতো করে নিজের পছন্দের লোকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বাস্তয়ন করতে চান। তাই কখনো দেখা যায় যে, আওয়ামীলীগের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা দাওয়াত থেকে বাদ পড়ছেন, বিপরীতে জামায়াত- বিএনপির নেতাকর্মীরা আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেরা অনেকটা বিভ্রত।’
ছাত্রলীগসহ সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা অনুষ্ঠান বয়কট করায় অনুষ্ঠানটি রূপ নেয় একটি নিস্তেজ উৎসাহ-আমেজহীন অনুষ্ঠানে। তবে কলেজের ওই অনুষ্ঠানটি শিক্ষার্থী শূন্যে হলেও বদির সমর্থিত স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগের কিছু নেতা, বহিরাগত ও অছাত্ররা শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত চেয়ার দখল করে অনুষ্ঠানে উপস্থিতি বাড়ানোর তৎপরতা লক্ষ্যণীয় ছিল।
ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের দাবি, কলেজ জাতীয় করণ হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একক ঘোষণায়। সুতরাং, সংবর্ধনা বা অভিনন্দনের একক দাবিদার শুধু প্রধানমন্ত্রী। তবে, কলেজ জাতীয়করণ করায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য এবং আওয়ামীলীগ সরকারের এই মহৎ উদ্যেগের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য অনুষ্টান আয়োজন করা যায়। কিন্তু, কলেজ প্রশাসনের উদ্যেগে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে এমপি বদির সাথে বিএনপি- জামায়াতের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতা সহ বিএনপি জামায়াত সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ এবং উপস্থিতি বেমানান।’
কলেজ প্রশাসনের আয়োজনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা দাওয়াত না পেলেও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এমবদির সাথে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জেলা এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা মামলার অন্যতম আসামী মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, এক সময়ের উপজেলা বিএনপির শক্তিধর নেতা পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকা ভূক্ত ইয়াবা ডন জাফর আহমদ সহ জামায়াত বিএনপির ডজন খানেক নেতাকর্মী।
সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি কলেজের সংবর্ধনায় নিজের সাথে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ায় ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান বয়কটে সমর্থন জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ আলী, সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর , টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন,‘ নির্বাচনের আগের এই সময়টুকু আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। যে সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অলি গলি নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করছে, ওই মুহুর্তে এমপি বদি জামায়াত-বিএনপির নেতাদের সাথে নিয়ে নিজের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক এবং গর্হিত এক কাজ।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমপি বদির রাজনীতির গোড়পত্তন আওয়ামী লীগ বা নৌকা নয়। তাই দলীয় নেতাকর্মীরা তার কাছে কোন পাত্তাই পাননা। এছাড়া তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার কাছে বারবার অবমূল্যায়িত হয়েছেন এবং বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা তার কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছেন। এসব বিষয় হাড়-মাংসে রক্ত শিরায় যাদের আওয়ামী লীগ, তাদের খুব ব্যতিত করে।’
তবে সংবর্ধনা সভায় এমপি আবদুর রহমান বদি আগের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে এবার প্রধানমন্ত্রীর নাম বেশ কয়েকবার উল্লেখ করে বলেছেন, এই এলাকায় যা উন্নয়ন হয়েছে তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কারণে হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হ্নীলা ইউনিয়নের মেম্বার মোঃ হোছাইন জানান, আমাদের এমপি তাঁর বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা স্বীকার করেছেন। এমপি বলেন, এই অবহেলিত জনপদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড করা হয়েছে।
Posted ১:১৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh