দেশবিদেশ রিপোর্ট | বুধবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৮
ইয়াবা সেবন, কেনা-কাটা, বহন ও বাজারজাতকরণে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ডের আইন জাতীয় সংসদে পাশ হবার পরেও কক্সবাজারের সীমান্ত পথে ইয়াবা পাচার থেমে নেই। সীমান্তের চোরাই পথে, স্থল ও জলপথ সহ আকাশ পথে সমানে পাচার হচ্ছে ইয়াবার চালান। মঙ্গলবার একদিনেই বিজিবি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মীরা আটক করেছে ৭৭ হাজার ৮৭০ পিস ইয়াবা সহ ৪ জন পাচারকারিকে।
ওদিকে টেকনাফে পুলিশও শুরু করেছে ইয়াবা বিরোধী এক শক্ত অভিযান। এ অভিযানে পুলিশ সাথে করে বুলডোজার নিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বুলডোজার দিয়েই পুলিশ সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের সুরম্য অট্টালিকাগুলোতে (ইয়াবা বাড়ী হিসাবে পরিচিত) আঘাত হানা শুরু করেছে। গত দুইদিনে পুলিশ টেকনাফ সীমান্তের তিনজন ইয়াবা কারবারির অট্টালিকা বুলডোজার দিয়ে আংশিক ভেঙ্গে দিয়েছে।
গত শনিবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে জলদস্যুদের আতœসমর্পণ ও কক্সবাজার শহরের এক হোটেলে অনুষ্টিত এক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং র্যাব মহাপরিচালক ইয়াবা পাচার বন্ধে কড়া নির্দ্দেশনা দিয়ে যান। এরপরই পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও কোষ্টগার্ড সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নেমেছে সাঁড়াশি অভিযানে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, সীমান্ত এলাকার ইয়াবা কারবারিদের বহু সুযোগ দেয়া হয়েছে ভাল পথে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু আর নয়। এবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ কারনেই পুলিশ ‘হার্ড লাইনে’ নামতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ইয়াবা কারবারিদের কালো টাকার আলিশান ভবনগুলো চিহ্নিত করেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত দু’দিনে টেকনাফের পুলিশ সীমান্তের তিনজন ইয়াবা কারবারির আলিশান ভবনে বুলডোজার চালিয়ে আংশিক গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ তিন কারবারি হচ্ছেন যথাক্রমে নুরুল হক ভুট্টো, জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান। তারা তিনজনই সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। এসব অট্টালিকার প্রতিটিতেই রয়েছে বেশ কয়েকটি করে কো¬জ সার্কিট ক্যামেরা।
সীমান্তে ইয়াবা পাচার রোধে র্যাপিড এ্যকশান ব্যাটালিয়ান-র্যাবও নতুন উদ্যমে সীমান্তে অভিযান শুরু করেছে। র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোঃ মেহেদী হাসান জানান, ইয়াবার চালান আটকের জন্য ইতিমধ্যে টেকনাফ সীমান্তে ৫ টি ক্যাম্প স্থাপন ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক এবং মেরিন ড্রাইভ সড়কে র্যাবের তল্লাশী চৌকিও স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার এতসব তোড়জোড়ের মধ্যেও ইয়াবা পাচার থেমে নেই। গত ২৪ ঘন্টায় তিনটি স্থানের অভিযানে আটক হয়েছে ৬১ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবার চালান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা অফিসের কর্মীরা গতকাল কক্সবাজার বিমান বন্দরে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে একজন ইয়াবা পাচারকারিকে। তার নিকট থেকে ২ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা বাসষ্ট্যান্ড এলাকা চম্পা হোটেলের দ্বিতীয় তলার আলমাস সৌর বিদ্যুৎ এর পিছনে ইলেকট্রিক ওয়্যারিং এর দোকানে কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা ট্যাবলেট ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল র্যাবের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন (২১), পিতা- আলী আহাম্মদ, গ্রাম- পশ্চিম সিকদার পাড়া (আলীর বাড়ী),হ্নীলা, ইমরান হোসেন (১৯), পিতা- আব্দুল মালেক, গ্রাম- নাটমোড়া পাড়া, ও মোঃ জাবেদ (৩৫), পিতা-মোঃ শাহ আলম, গ্রাম- পশ্চিম পানখালী, সর্ব থানা- টেকনাফ, জেলা- কক্সবাজারদের’কে আটক করে। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের দেহ তল্লাশী করে ১৪,৯৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেটের আনুমানিক মূল্য ৭৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কক্সবাজার জেলা কর্মকর্তা সৌমেন মন্ডল জানান, কক্সবাজার সাগর পাড়ের লেগুনা বীচ নামক একটি আবাসিক হোটেলে সংঘবদ্ধ ইয়াবা কারবারিদের রয়েছে বড় আস্তানা। এই আস্তানার এক সদস্য ইয়াবার একটি চালান নিয়ে গতকাল রিজেন্ট বিমানে কক্সবাজার থেকে ঢাকা রওয়ানা দেয়ার সময়ই ধরা পড়ে যায়। আটক পাচারকারি তার নাম হাবিব (২৪) এবং গাজিপুরের টংগির বাসিন্দা বলে জানিয়েছে।
অপরদিকে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফের হ্নীলা খারাংখালী নামক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করে। এ সময় পাচারকারি বস্তাটি ফেরে পালিয়ে যায়। বিজিবি সদস্যরা আরেক অভিযান চালিয়ে টেকনাফের সাবরাং নাজিরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবার আরো একটি চালান। এসময় পাচারকারি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। #####
Posted ১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh