তোফায়েল আহমদ | মঙ্গলবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৯
সরকারের একটানা দশ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এবার পার করতে হবে আরো পাঁচ বছর। কিন্তু বড় কঠিন ভাবতে হবে সামনের দিনগুলো। হেলাফেলা করাটা ভাল হবে না মোটেই। আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসবে পাঁচ বছরের জন্য-একথা বলেছিলেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তাও মাস -দুয়েক আগের কথা। অথচ ওয়ান ইলেভেন এবং পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে ড. ইউনুসের সম্পর্ক মোটেই ভাল নেই-এটা সবারই জানা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবার প্রকাশ্যে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেনও। তবুও ড. ইউনুস তৃতীয়বারের মত শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতায় আসার আগাম ঘোষণাটি দিয়েছিলেন অনেকটা স্বস্থি প্রকাশের মাধ্যমেই। সেই সাথে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যারা লড়ছিলেন তাদেরকেই বরং তিনি নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।
ড. ইউনুস একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তিনিই জানতেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর দল আবারো ক্ষমতায় আসছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। এমনকি নির্বাচনের বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই বিদেশী গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপ দলের পক্ষ থেকেও এরকম বলা হচ্ছিল। সুতরাং ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলটি কোন অনাকাংখিত নয়। আর সেরকম নয় বলেই আন্তর্জাতিক বিশ্বও রবিবারের নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। বরং ২০০১ সালের নির্বাচনের ফলাফলটিই সবার কাছে অবাক করা ছিল।
যাই হোক একটি নির্বাচনের আগে এবং পরে অনেক তর্ক-বিতর্ক থেকে থাকে। যেমনি ভাবে ১৯৭৩ সাল থেকে রবিবারের নির্বাচন পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলো নিয়েই কম-বেশী কথা উঠেছে। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ক্রমশ হারিয়ে যায় এসব অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। নিশ্চয়ই এবারও হবে তাই। তবে নির্বাচন পরবর্তী আগামী ৫ টি বছরের জন্য এখন থেকেই হোম ওয়ার্ক করতে হবে ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। সেই হোম ওয়ার্ক নিশ্চয়ই এক কালের তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের মত হবে না।
আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতা-কর্মীদের হোম ওয়ার্ক হতে হবে অত্যন্ত মানবিক, গঠনমূলক, বাস্তবসন্মত, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, এলাকার উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গণসচেতনতা বৃদ্ধি এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত। সর্বাগ্রে গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে-আমরা (আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী) কেন আমার পাড়া-প্রতিবেশীদের আস্থায় আনতে পারছি না। প্রতিবেশী কেন আমার নেতৃত্বকে অবজ্ঞা করছে ? আমাকে কেন এড়িয়ে চলছে ? আমি একটি ক্ষমতাসীন দলীয় তৃণমূলের নেতা হিসাবে যদ্দুর পেরেছি এলাকার উন্নয়ন এবং এলাকাবাসীর সেবা দিতে তার সবই করেছি। কিন্তু তবুও কেন তাদের মন পাচ্ছি না ? এই লোকগুলোর মনে কেন স্থান নিতে পারলাম না ?
ভোট কেন্দ্রের ভোটারদের প্রতি যদি কিনা আমার আস্থা থাকত তাহলে আমার দল বা আমি আজ অবশ্যই ভয় পেতাম না। আমি আজ ভোটারদের নিয়ে ভীত কেন-একথাটা নিয়ে আতœসমালোচনার সময় এসেছে দলীয় নেতা-কর্মীদের। এবার তৃতীয় বারের মত দল ক্ষমতায় এসে নেতা-কর্মীদের সংশোধন অবশ্যই হতে হবে। সংশোধন না হলে মানুষ ক্রমশ আরো দুরে সরে যাবে।
একটি সরকারের জন্য তার দল কত গুরুত্বপূর্ণ সেটি একমাত্র বিএনপিই হাঁড়ে হাঁড়ে উপলদ্ধি করছে। রাগ করলেও বলতে হয়, বিএনপি’র আজ এ অবস্থার জন্য শীর্ষ নেতা তারেক রহমান থেকে শুরু করে দেশব্যাপি তার তৃণমুলের এক শ্রেণীর নেতা-কর্মীরা যে কত দায়ি তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তেমনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও এমনসব অভিযোগ থেকে কোনভাবেই মুক্ত নয়। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নতুন করে শিক্ষা নিতে হবে-কিভাবে জনমত দলের পক্ষে আরো ব্যাপকতর করা যায় সেটাকেই অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
নৌকা প্রতীকের সরব-নীরব সমর্থকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, শতকরা হিসাবে সিংহ ভাগই বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পছন্দ করেই ভোট দিয়েছেন। তাদের পছন্দ -শেখ হাসিনা দুর্নীতির উর্ধে থাকার বিষয়টি। সুতরাং দেশটি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁকে দিয়ে নির্ভর করা যায়। এবারের নির্বাচনে যারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন অন্তত তাদের বেলায় এরকমই হয়েছে।
এরপর যারা নৌকার সমর্থক তারা শেখ হাসিনার উন্নয়নকে সমর্থন করেছেন। তারপর রয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ, ঐতিহাসিক নৌকা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত ব্যক্তিবর্গের অন্ধ সমর্থন। আর যারা দলটিকে সমর্থন করছেন না তাদের একটি বড় অংশ রয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে সম্পর্কের তিক্ততা, দলীয় বিরোধ, রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমা সহ হরেক রকমের অজুহাত।
উদাহরণ স্বরুপ ৩০ ডিসেম্বরের আগে দফায় দফায় নানা ঘটনার নামে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গণহারে মামলার আসামী করা মোটেই ভালভাবে নেয়নি ভুক্তভোগীরা। এসব মামলায় যেসব লোকজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করাটাও জরুরি বিষয় হিসাবে বিবেচনায় নিতে হবে। সেই সাথে তদন্ত সাপেক্ষে হয়রানি মূলক মামলাগুলোর দ্রুত আইনী সমাধান করাও দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ একটি রাজনৈতিক দলীয় সরকারকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য মানুষের সাথে দরদি আচরণটাও জরুরি। দরকার সুশাষনের। কেননা রবিবারের ভোট কেন্দ্রে অনেক ক্ষুব্ধ লোকের সাথে আলাপ হয়েছে। তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন এভাবে-‘ভাই ঘরেইতো ঘুম হারাম আজ বেশ ক’দিন। প্রতি রাতেই ঘরে পুলিশ যায়।’ পুলিশ আতংক- এক ‘মহাতংক।’ তাই এসব মাথায় রেখে নতুন সরকার এবং দলীয় লোকজনকেই এগিয়ে আসতে হবে-সরকারকে জনপ্রিয় করার প্রক্রিয়ায় সামিল হতে।
Posted ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh