বৃহস্পতিবার ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

এত কড়াকড়ি, তবু মাদক আসছে কীভাবে?

  |   বুধবার, ২৯ আগস্ট ২০১৮

এত কড়াকড়ি, তবু মাদক আসছে কীভাবে?

মাদকের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় আড়াইশ’ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মাদকের আস্তানাগুলোতে চলছে কঠোর নজরদারি। সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সেসব পয়েন্টেও অভিযান চলছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি করছে। এছাড়া কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, জয়পুরহাটসহ সীমান্তের অন্যান্য পয়েন্টেও চলছে কড়া নজরদারি। তবু দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ঢুকছে ফেন্সিডিল ও হেরোইন। এরপর এসব মাদক রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এত কড়াকড়ির পরও কীভাবে মাদক ঢুকছে এবং কীভাবে তা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে।

এ প্রসঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা সত্য যে মাদকের সরবরাহ একেবারে বন্ধ করা যায়নি। তবে সরবরাহ অনেকটাই কমে এসেছে। একেবারে বন্ধ করাটা কঠিন। আমাদের অপারেশনগুলো চলছে। আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমরা আশা করছি মানুষ এটা প্রতিরোধ করবে। একই সঙ্গে আমাদের এনফোর্সিং এজেন্সি নিয়মিত কাজ করে যাবে।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি হিসাব বলছে, মে মাসে সারাদেশ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ৪৬ কেজি হেরোইন, ৬ হাজার ৫৬০ কেজি গাঁজা, ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ২৫৪ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। জুন মাসে হেরোইন ২২ কেজি, ৪ হাজার ৯১৭ কেজি গাঁজা ও ২৬ লাখ ৫১ হাজার ৯০২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। জুলাই এবং আগস্ট মাসেও প্রায় একই পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।’

মূলত এই বছরের ৩ মে র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলায় সংস্থাটির সদর দফতরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব যেভাবে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর র‌্যাব প্রথমে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে মাদকসেবী ও খুচরা মাদকসেবীদের দণ্ড দেওয়া শুরু করে। পরবর্তীতে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিট মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করে। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের অভিযানে মোট ৪২ হাজার ৮০৫ জন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী গ্রেফতার হয়েছে। মামলা হয়েছে ৩৩ হাজারেরও বেশি।

র‌্যাব সূত্র জানায়, ৪ মে থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে তারা এখন (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৬৮৫টি অভিযান চালিয়েছে। এসব অভিযানে ৪ হাজার ৫৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৯ কেজি হেরোইন, ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৩ পিস ইয়াবা, ৩২ হাজার ১২১ বোতল ফেন্সিডিল ও এক হাজার ৪৫৭ কেজি গাঁজা। এছাড়া র‌্যাবের মাদকবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১ হাজার ১৮৪ জন মাদক ব্যবসায়ী ও ৭ হাজার ৭৩ জন মাদকসেবীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গত চার মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৩৩ জনেরও বেশি মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

এত নিহত ও গ্রেফতারের পরেও মাদক ব্যবসায়ীরা এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খানের সঙ্গে।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদক ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা সময়ের ব্যাপার। একটা জিনিস তো হঠাৎ করে বন্ধ হয় না। সাপ্লাই চেইন, ডিমান্ড অনেক ব্যাপার আছে। সাপ্লাই চেইনের ওপর আমরা রেস্ট্রিকশন বা প্রেসার ক্রিয়েট করছি, যাতে সাপ্লাই কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে দেশে মাদক আসতে না পারে। তারপরও আসছে, আমরা এটা বন্ধ করতে পারিনি। আমার মনে হয় এটা বন্ধ করতে আরও সময় লাগবে। এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়তে হবে। যদি ডিমান্ড বা চাহিদা কমে যায় তাহলে সাপ্লাই অটোমেটিক কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে।’

মাদকবিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, চাহিদা থাকার কারণে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। কৌশল পাল্টিয়ে চলছে ব্যবসা। এমনকি মাদক বহনও করা হচ্ছে নিত্য-নতুন কৌশলে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাদক বিক্রির ক্ষেত্রে পরিচিত মাদকসেবীকে গুরুত্ব দিচ্ছে খুচরা মাদক ব্যবসায়ীরা। আর মাদক বহন করতে আগের চাইতে বেশি হারে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী ও শিশুদের। এছাড়া বহনের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন ব্যক্তিকে বেশি অর্থের লোভ দেখিয়ে কাজে নিযুক্ত করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইয়াবা এখন কক্সবাজারের টেকনাফ পয়েন্ট দিয়ে দেশে প্রবেশের পাশাপাশি সাগর পথে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে আবার নদীপথে ঢাকায় আনার পাশাপাশি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নদীপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে পুলিশি তল্লাশির সুযোগ না থাকায় আগে থেকে পাওয়া তথ্য ছাড়া এসব মাদক বহনকারী ও ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।

ওই সূত্র জানায়, ফেন্সিডিল মূলত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী জেলা এবং কুমিল্লা, ফেনী ও বি. বাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে দেশে আনা হয়। দেশের ভেতর আনার পরপরই পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের ম্যানেজ করে অন্যান্য মালামালের মধ্যে তা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সবজি বা অন্যান্য পণ্যবাহী ট্রাকগুলোতে নিয়মিত ফেন্সিডিল আনা-নেওয়া করা হয়। কিন্তু আগাম তথ্য ছাড়া পণ্যবোঝাই ট্রাকের মাল নামিয়ে তা চেক করা সম্ভব হয় না। সাধারণত এই সুযোগটি কাজে লাগায় মাদক ব্যবসায়ীরা। ঢাকায় প্রবেশের পর বা প্রবেশের আগে কৌশলে ফেন্সিডিল ভর্তি বস্তাগুলো সরিয়ে নেয় মাদক ব্যবসায়ীরা।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসছি। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে ছদ্মবেশে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।’

দেশবিদেশ /২৯ আগস্ট ২০১৮/নেছার

Comments

comments

Posted ৮:০২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৯ আগস্ট ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com