এফ.এম সুমন, পেকুয়া | শনিবার, ০৬ অক্টোবর ২০১৮
জঙ্গিদের ভয়াবহ কূফল সম্পর্কে ইংরেজীতে রচনা লিখে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদানের সুযোগ পেয়েছেন কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় আজ পাড়া গায়ের এক শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয় সাধারণ অধিবেশনের একটি সেশনে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে আজকের যুব সমাজের ভূমিকা কি হওয়া উচিৎ যে বিষয়ে ভাষণ দায়েরও সুযোগ পেয়েছেন এই শিক্ষার্থী। গত ২৬ সেপ্টেম্বর নিউইরর্কের জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ সময় রাতে ভাষণ দেন তিনি। পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মাতবর বাগীর নাতনী ও পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী তনিমা আফরোজ শুধু কক্সবাজারের নয় সারা দেশের যুবসমাজের মূখ উজ্জ্বল করেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে। তার ভাষণ দান কালে সাধারণ অধিবেশনের ঐ সেশনে বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়–য়া তনিমার ইংরেজিতে দেয়া ভাষণ অনেক দেশের মন্ত্রীরা মনোযোগ দিয়ে শুনেন, দেশের অখ্যাত এক কলেজের পড়–য়া তনিমা জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। তনিমা সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ গন দাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান শেষে পেকুয়ায় গ্রামের বাড়িতে আসলে তার সাথে গত বৃস্পতিবার বিকেলে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়।
বিস্তারতি আলাপে তনিমা জানান, আমি গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে কাতার এয়ারলাইন্স হয়ে নিউইয়র্ক গমন করি। আমি নিউইয়র্কের দ্যা রোজ বেল্ট হোটেলে ওঠি। সেখান থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে বক্তব্য রাখি। আমি আমার গল্পের যে বিষয় অন্ধকার পথ থেকে যে আমার গ্রামের রাকিব নামের এক যুবককে আলোর পথে ফিরিয়ে আনি। জঙ্গিবাদের স্থান যে কোথাও নেই এটা যে কোন ধর্মই সমর্থন করেনা সেটা বুঝাতে সক্ষম হই এবং তাকে এই অন্ধাকার পথ থেকে ফিরিয়ে আনি। এই বিষয় নিয়ে আমি বক্তব্য রাখছিলাম তারা আমাকে প্রশ্ন করলেন কেন আমি এপথে আসলাম? তাদের প্রশ্নের জবাবে আমি বললাম কোডেক তরুণ আলো নামের একটি এনজিও সংস্থা আমাদের কলেজে এসে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে আমাদের সাথে ক্লাসে আলোচনা করলেন সেখান থেকে আমি মনে মনে ঠিক করলাম আমি এ বিষয় নিয়ে সমাজে কাজ করবো তখন থেকে আমি এ বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করি এবং রাকিবকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার প্রধান সহ গণ্যমান্য ব্যাক্তি ও মানবাধিকার কর্মীদের সাথে আমার দেখা হয় তারা আমাকে এব্যাপারে ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখা আমার জন্য পুরোটাই ছিল স্বপ্নের মতো। তবে আমার জন্য এটা ছিল জীবনের বড় রকমের অভিজ্ঞতা। আমি হয়তো জাতিসংঘের অধিবেশনে যাওয়ার সুযোগ না পেলে তা উপলদ্ধি করতে পারতাম না। আমাকে যে কয়টি প্রশ্ন করা হয়েছিল সব কটির আসলে বিষয় ছিল কিভাবে আমি একজন বিপদগামী যুবককে আলোর পথে ফেরালাম। আমি বলতে চাই কোন ধর্মেই সত্যিকার অর্থে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে বিশ্বাস করেনা। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে এসব হত্যাকান্ড চালান তারা আসলেই অপব্যখ্যায় ডুবে আছে। তাদেরকে বুঝিয়ে আলোর পথে আনতে হবে। তবে সে দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের। আমি যেটা মনে করি সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ে সবার আগে কাজ করতে হবে যুব সমাজকে। যুব সমাজের সচেতনতা ছাড়া আমি মনে করি জঙ্গিবাদ রোধ করা সম্ভব নয়। আমি একজন মেয়ে হয়ে যেটা অনুভব করি তাহলো আমি অবাক হলাম সবাই আমাকে উৎসাহ দিতে লাগলো, প্রথমে আমি আসলেই নার্ভাস ছিলাম। তবে আমি সত্যি অবাক হলাম এতো দুর আসা যাওয়া এত বড় বিষয় নিয়ে কাজ করা আমার ফ্যামিলি, আমার কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার ও আমার সকল শিক্ষক আমার সহপাঠিরা যেভাবে উৎসাহ দিতে লাগলো সত্যিই আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমার এতোটুকু যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি যার অবদান সে হলো আমার কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মো আলম, আমি তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। সব শেষে আমি সবার প্রতি একটি অনুরোধ রাখেতে চাই তাহলো আগামীর বিশ্বটা একটি নিরাপদ বাসভুমি দেখতে চাই যেখানে উগ্রবাদের কোন ঠাঁই নাই। যতদিন পারি উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস বাদের বিপক্ষে কাজ করবো একটি জঙ্গিমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে।
Posted ১:৪১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৬ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh