| বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যাকান্ডের পর কিছুদিন ইয়াবা পাচার কমে এলেও স¤প্রতি আবার তা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আর এজন্য মাদক কারবারিরা নিত্যনতুন রুট পরিবর্তন করছে। সীমান্তের বিভিন্ন পাহাড়ি সড়ক ব্যবহার করে নিরাপদে পাচার করছে কোটি টাকার ইয়াবা। গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ। এ ঘটনার পর কিছু দিন কমে আসে ইয়াবা পাচার। কক্সবাজার জেলা পুলিশে গণহারে বদলিসহ বিভিন্ন ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট রুট পরিবর্তন করে ইয়াবা পাচার করছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী সড়ক টেকনাফ হয়ে উখিয়ার বালুখালী ও বাইশফাঁড়ি সড়ক ব্যবহার করছে পাচারকারীরা। একইভাবে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন শৈলরডেবা সড়ক হয়ে রত্মাপালং ভালুকিয়া, হলদিয়াপালং পাতাবাড়ি সড়ক দিয়ে প্রবেশ করে ইয়াবার চালান যাচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
টেকনাফ ২ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান সাংবাদিকদের জানান, ১২ জানুয়ারী সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিজিবি সদস্যরা হ্নীলার দমদমিয়া ও টেকনাফে পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৩ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছেন। বিজিবি’র উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাচালানীরা পালিয়ে যাওয়ার পর বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চোরাকারবারিদের ফেলে যাওয়া ইয়াবার চালানগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্তের বিভিন্ন অলিগলি, ছোট সড়কগুলোকে নিরাপদ রুট হিসাবে বেছে নিয়েছে। এ কারণে এসব সড়ক চিহ্নিত করে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও পাচারের পেছনে কারা জড়িত তা তৃণমূল পর্যায়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, পাচারকারি সিন্ডিকেট পুলিশের অবস্থান লক্ষ্য করে বার বার পাচারের রুট পরিবর্তনের কারণে ইয়াবা পাচারকারীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুলিশ বাহিনীকে মাদক পাচার প্রতিরোধে সর্তক অবস্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সীমান্তের নিভর্রযোগ্য সূত্র জানা যায়, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকা সত্তে¡ও উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। শুধু স্থলপথ নয়, আসছে সাগরপথেও। নিত্যনতুন কৌশলে মাদকের চোরাচালান আসছে। কখনও ত্রাণবাহী কিংবা জরুরি পণ্যবাহী যানে; মাছ ধরার ট্রলার, কাভার্ড ভ্যান, কখনও পায়ুপথে, কখনও যানবাহনের ইঞ্জিনের কাভারে করে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা। করোনার মধ্যে মাদকসেবীদের জন্য হোম ডেলিভারিও হচ্ছে।
টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, দমদমিয়া, লেদা, রঙ্গিখালী, উলুচামারী, মৌলভীবাজার, নোয়াখালীয়াপাড়া, শাপলাপুর, সাতঘরিয়াপাড়া, উখিয়ার আমতলি, ডেইলপাড়া, ডিগলিয়া, টাইপালং, দরগাহবিল, থাইংখালী, পালংখালী, বালুখালী, রহমতের বিল, মরিচ্যা পাতাবাড়ী, রেজুখাল, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, গর্জনবুনিয়া, তুমব্রæসহ অন্তত ৩৫টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা ইয়াবা পাচারে সম্পৃক্ত হওয়াতে পাচারকারীরা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান ও পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে পাচারকারী সিন্ডিকেট তাদের মজুদ করা ইয়াবার চালান পাচার করছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। যার ফলে এ পর্যন্ত বড় কোনও ইয়াবা কারবারি আটকের খবরও পাওয়া যায়নি। স¤প্রতি আত্মসমর্পণকারী সীমান্তের ইয়াবা গডফাদারদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে বহাল তবিয়তেই ইয়াবা কারবার চালাচ্ছে নতুন করে। ‘ইয়াবার গেটওয়ে’ হিসেবে পরিচিত টেকনাফের খুব কাছাকাছি মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে প্রায় ৪০টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবার চালান আসে একমাত্র টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সৌমেন মন্ডল জানান, সীমান্তে যেকোন মূল্যে ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদকের চোরাচালান বন্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। ইয়াবা পাচারকারীদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। স¤প্রতি ইয়াবার চালান বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের। আমরা বসে নেই, প্রতিনিয়ত চলছে আমাদের মাদকবিরোধী অভিযান ও ধর পাকড়। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৬০ জন গডফাদারসহ ১১৫১ জন মাদক কারবারির তালিকা প্রকাশ করে সরকার। এই তালিকায় টেকনাফ সীমান্তেরই রয়েছে ৯ শতাধিক ইয়াবা কারবারি।
এডিবি/জেইউ।
Posted ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২১
dbncox.com | ajker deshbidesh