শফিক আজাদ, উখিয়া | মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯
উখিয়ায় চলতি আমন চাষাবাদে ব্যাপক আকারে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আমনের ফলন ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে বাদামী পোকার প্রাদূর্ভাবে দিশেহারা হয়ে পড়ছে কৃষকেরা। স্থানীয় কৃষকদের ভাষায় গুনগুনি পোকার মারাত্মক আক্রমন প্রতিরোধে শুরুতে কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা যথাযথ পরামর্শ দিতে পারেননি। কৃষি অফিসের দায়িত্বশীলদের মাঠেও তেমন পাওয়া যায়না বলে কৃষকদের অভিযোগ। এতে আমন ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে উখিয়ায়।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) আবু মাসুদ সিদ্দিকী আমন ক্ষেতে গুনগুনি পোকা রোগের প্রাদুর্ভাবের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পুরো এলাকায় মাইকিং সহ লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে কৃষকদের কীটনাশক সহযোগিতা প্রদানের জন্য উপজেলা পরিষদের নিকট সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। মাঠ কর্মীদের কৃষকরা পাশে না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
উখিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার রতœাপালং, হলদিয়া পালং, রাজাপালং, জালিয়া পালং ও পালংখালী ইউনিয়নে ৮ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে আমন চাষের আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা তাদের নিজ উদ্যোগে উন্নত জাতের বীজ সংগ্রহ, প্রযুক্তি ব্যবহার ও আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেছেন। এছাড়াও সঠিক পরিচর্যা, পানি নিষ্কাশন ও রোগ বালাই দমনে বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করেছেন কৃষকরা।
রাজাপালং ইউনিয়নের পূর্বডিগলিয়াপালং গ্রামেন কৃষক সব্বির আহমদ (৪৭) জানান, বর্তমানে আমন ক্ষেতের জমিতে ধানের ফলন আসতে শুরু করেছে। এমনকি কিছু কিছু জমিতে ধান পাকন ধরেছে। কিন্তু হঠাৎ গুনগুনি রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ায় হতাশা ও উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে।
এভাবে অনেক কৃষক জানান, শত শত একর জমিতে গুনগুনি পোকা বা কারেন্ট রোগ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি প্রাদূর্ভাবে পরিণত হচ্ছে।
এদিকে উখিয়া কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ ইউনিয়ন পর্যায়ে রোগবালাই প্রতিরোধ ও রোগ বালাই দমনে নানা কৌশল এবং ওষুধের ব্যবহার বিষয়ে কৃষকদেরকে ধারণা দিয়ে যাচ্ছেন। এব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে দেখাশুনা করতে কক্সবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আতিকুল্লাহ উখিয়ায় সংশ্লিষ্টদের সাথে কৌশল নির্ধারণ করছেন বলে তিনি জানান।
রতœাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়াপালং গ্রামের ফজল করিম(৪৫) হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাতাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসন(৪৮) জানায়, গুনগুনি প্রকার আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ধান চাষ আগুনের মত পুড়ে যায়। যা ওষুধ ছিটিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ফলিয়া পাড়া, পাইন্যাশিয়া এলাকার কৃষক আব্দুল গফুর (৪৩) জানান, কীটনাশক ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। ধান খেত বিকেলে একরকম দেখলে সকাল অন্য রকম দেখা যায়। ঘন্টায় ঘন্টায় ধানের রূপ পরিবর্তন হয়ে বিবর্ণ আকার ধারণ করছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মাসুদ ছিদ্দিকী জানান, বেশ কিছু এলাকায় এ রোগের দেখা দিয়েছে। আবাহাওয়ার বৈরি প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তন দেখা দেওয়ায় এর তীব্রতা বেড়ে গেছে। ধান ক্ষেতে আদ্রতা বেশী হওয়ায় এ বাদামী ঘাস ফডিং বা কারেন্ট অথবা স্থানীয়দের ভাষায় গুনগুনি পোকার প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে রোগ দমন ও পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ধানের গোছা ফাঁক করে দিয়ে নিচে সূর্যের আলো পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেন তিনি।
স্থানীয় কৃষকদের অভিমত হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বা অগ্রিম টাকা দিয়ে বর্গা জমি নিয়ে চাষাবাদ করেছে। কিন্তু গুনগুনি বা কারেন্ট রোগের কারণে চাষাবাদ পুড়ে মরে যাওয়ায় এখন আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন হওয়ার মুখে পড়েছে কৃষকরা।
দেশবিদেশ/নেছার
Posted ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh