রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া | রবিবার, ২৯ জুলাই ২০১৮
উপজেলা ভূমি প্রশাসন বার বার অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলনের মেশিন জব্দ ও বালি উত্তোলনকারী আইনের আওতায় এনে নগদ অর্থদন্ড করলেও থামানো যাচ্ছে না বালি লুটের মহোৎসব। সরকারি ভাবে উখিয়ায় ১০টি বালি মহালের ইজারা প্রদান করা হলেও প্রশাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অর্ধশতাধিক পয়েন্ট থেকে নির্বিচারে বালি উত্তোলন করছে এলাকার বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। উপজেলা ভূমি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরের জন্য পালংখালী ইউনিয়নের ৪টি ও উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে ৬টি সহ ১০টি বালি মহালের ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব বালি মহাল থেকে সরকার নির্ধারিত অংকের রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হলেও অর্ধশতাধিক পয়েন্ট থেকে অবৈধ ভাবে উত্তেলিত বালুর বিপরীতে সরকার কানাকড়িও পাচ্ছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ নির্বিচারে বালি উত্তোলনের ফলে জমিজমা ক্ষেত খামার দীর্ঘদিনের বসতভিটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
গ্রাম্য রাস্তায় বালি ভর্তি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়ক, কালভার্ট, ব্রীজ নড়বড়ে ধ্বসে পড়ার আশংকায় অচল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পালংখালীর বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার অভিযোগ করে জানান, থাইংখালী থেকে তেলখোলা বাজার পর্যন্ত খালের ১৫টি অংশে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করছে এলাকার কতিপয় জনপ্রতিনিধি সহ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এছাড়াও পালংখালী খালের ৫টি পয়েন্টে বালুখালীর ছড়া, বালূখালী খাল, রাজাপালং ইউনিয়নের দোছরী, হাজিরপাড়া, হরিণমারা, হিজলিয়া, গয়ালমারা, তুতুরবিল, খয়রাতি। জালিয়াপালং ইউনিয়নের রেজুখালের মনির মার্কেট থেকে শুরু করে ছোটখাল পর্যন্ত ৬টি পয়েন্ট, মনখালী, মাদারবনিয়া, চেপটখালী ও হলদিয়াপালং ইউনিয়নের মরিচ্যা, ধুরুংখালী খালের ৪টি পয়েন্ট সহ প্রায় অর্ধশতাধিক খালের পয়েন্ট থেকে প্রতিনিয়ত টনটন অবৈধ বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। থাইংখালী ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মানিক চাকমা, স্থানীয় পরিবেশবাদী সমাজসেবক মোঃ শাহজাহান সহ একাধিক গ্রামবাসী অভিযোগ করে জানান, উখিয়ার অবহেলিত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত গ্রাম তেলখোলা, মোছারখোলাসহ ৫টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
স্থানীয় অধিবাসী বাওনো চাকমা জানান, থাইংখালীর প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব যানবাহন দিয়ে বালি উত্তোলন ও পাচার করার কারণে থাইংখালী হয়ে তেলখোলা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ এখন সম্পূণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যোগাযোগের অব্যবস্থা ও নাজুক পরিস্থিতির কারণে ছাত্রছাত্রীরা তেলখোলা মোছার খোলার শিক্ষার্থীদের ৭ কিলোমিটার পায়ে হেটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর উৎপাদিত পন্য সামগ্রী সময়মত বাজারজাত করতে না পারায় অনেকেই অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার এহেন নাজুক পরিস্থিতির নেপথ্যে বালি উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটকে দায়ী করে স্থানীয় অধিবাসীরা অবিলম্বে থাইংখালী খালের বালি উত্তোলন বন্ধ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার দাবী জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মোহাম্মদ একরামুল ছিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, অবৈধ বালি উত্তোলনের দায়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে খুব শীঘ্রই থাইংখালী খালসহ উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করা হবে।
দেশবিদেশ /২৯ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১০:১৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৯ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh