দেশবিদেশ রির্পোট | রবিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯
দেশের ইয়াবা শহর টেকনাফে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করলেও ইয়াবা পাচার থেমে নেই। নিত্য নতুন কৌশলে চলছে ইয়াবা পাচার। গত শুক্রবারও টেকনাফ সীমান্তে বিজিবি’র পৃথক অভিযানে উদ্ধার হয়েছে দেড় লাখ ইয়াবার চালান। সীমান্ত জনপদে একের পর এক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ইয়াবা কারবারি নিহতের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। তারপরও ইয়াবা কারবারের টাকার লোভের সামনে যেন এমন অনাকাংখিত মৃত্যুও এখন হয়ে পড়েছে গৌণ। তদুপরি কারবারিদের আতœসমর্পণের ঢামাঢোলের মধ্যেও চলছে ইয়াবা কারবার।
উপরন্তু আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থাগুলোর সদস্যরা কেবল মাত্র ইয়াবা কারবারিদের টার্গেট করলেও নিরাপদেই রয়ে গেছে সীমান্তের হন্ডি সিন্ডিকেট। হুন্ডি সিন্ডিকেটে এ পর্যন্ত আঘাত না করায় একদম নিরাপদেই তাদের কারবার চলছে। ফলে সীমান্তে ‘বন্দুক যুদ্ধের’ মাধ্যমে এত বিপুল প্রাণহানি হবার পরেও ইয়াবা পাচার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্তের লোকজন জানিয়েছেন, ইয়াবা কারবারিদের সাথে হুন্ডি সিন্ডিকেটের সদস্যদের রয়েছে ওতপ্রোত সম্পর্ক। ইয়াবার কারবার চলে হুন্ডির মাধ্যমেই। সচেতন মানুষের বক্তব্য হচ্ছে-ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে হলে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে।
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের হুন্ডি সিন্ডিকেট রয়েছে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, দুবাই, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া সহ অন্যান্য দেশের সাথে সম্পৃত্ত। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাচার করা ইয়াবার চালানের লেনদেন হয়ে থাকে হুন্ডির মাধ্যমেই। তাই ইয়াবা ডনদের অনেকেই হুন্ডি সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আন্তর্জাতিক হুন্ডি সিন্ডিকেটের অফিস রয়েছে দুবাই। দুবাই হয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার, থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া সহ অন্যান্য দেশের সিন্ডিকেট সদস্যদের সাথে লেনদেন হয়ে থাকে।
কয়েক বছর আগে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের হুন্ডি সিন্ডিকেটের প্রধান ছিলেন জলিল আহমদ প্রকাশ হুন্ডি জলিল। ফিঃ বছর হুন্ডি সিন্ডিকেটের নেতা নির্বাচিত হয়ে থাকে। বর্তমানে টেকনাফ সীমান্তের জাফর আলম প্রকাশ টিটি জাফর হুন্ডি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে। টেকনাফ সীমান্তের অন্যতম ইয়াবা ডিলার হাজী সাইফুল করিম এবং টেকনাফের শীর্ষ স্থানীয় অপর একজন ইয়াবা ডন হুন্ডি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
তাছাড়াও রয়েছে টেকনাফের বাজার পাড়ার বাসিন্দা আইউব প্রকাশ বাট্টা আই্উব। টাকার বিনিময় হারকে বাট্টা বলে। তাই আইউবের নাম হুন্ডি আইউব হিসাবে পরিচিতি পায়। বাট্টা আইউব সাবেক ওসি আবদুর রহমানের পুত্র ইয়াবা তালিকাভুক্ত শাহেদুর রহমান নিপুর শ^শুর। আইউবের ভাই হাসান টেকনাফে থেকে কারবার চালাচ্ছে। তদুপরি টেকনাফের একেটেল করিম ও বিকাশ মোহাম্মদ আলীর কারবারও হচ্ছে ইয়াবার টাকার লেনদেন করা। এছাড়াও হাল সময়ে টেকনাফের মধ্যম জালিয়া পাড়ার নুর হোসেনের পুত্র ইয়াছিন, হাঙ্গরপাড়ার বোরহান, উপজেলা পাড়ার নুরুচ ছমদ লালু এবং টেকনাফের একজন বিশিষ্ট নেতার পার্টনার হিসাবে পরিচিত মোহাম্মদ আলমগীর বড় ধরনের হুন্ডি বাজারের সাথে জড়িত। তদুপরি টেকনাফের হ্নীলার দুই ভাই নির্মল ও বিমল এবং সিকদার পাড়ার আবু বকরের পুত্র মাসুকও রয়েছে হুন্ডি সিন্ডিকেটে।
ইয়াবা ডিলার হাজী সাইফুল করিম গত বছরের মে মাসে ইয়াবা বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবার সাথে সাথেই দুবাই পাড়ি জমান। হাজী সাইফুল করিম ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক আইডিতে ষ্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন-‘ হুন্ডি জাফরকে ধরলে সব কিছু বের হয়ে যাবে। সাথে ইয়াবা ব্যবসার পার্টনার কে কে আছে। বাংলাদেশকে ইয়াবা মুক্ত করতে হবে।’ হুন্ডি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত একজন ইয়াবা ডিলারের দেওয়া ফেসবুক ষ্ট্যাটাসের পরেও কোন ব্যবস্থা অদ্যাবধি নেওয়া হয়নি। কক্সবাজার জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সৌমেন মন্ডল জানিয়েছেন, হুন্ডি সিন্ডিকেটের কোন হালনাগাদ তালিকা তাদের কাছে নেই। তিনি স্বীকার করেছেন হুন্ডি সিন্ডিকেট বন্ধ করা না গেলে ইয়াবা কারবার বন্ধ করা যাবে না। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে ৩১ জন হুন্ডি সিন্ডিকেট সদস্যের নাম সম্বলিত একটি তালিকা গত ক’বছর আগে করা হয়েছিল। তবে পুলিশের হেফাজতে থাকা ইয়াবা কারবারিরা অন্তত ২০ জন হুন্ডি সিন্ডিকেট সদস্যদের নামধাম জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশবিদেশ /নেছার
Posted ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh