দেশবিদেশ রিপোর্ট | রবিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯
‘পাঁচ দিনের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আঁরলয় যোগাযোগ গর’
‘আইয়ো বেগগুন মিলেমিশি তওবা গরি’
উখিয়া টেকনাফের দশম সংসদের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি বলেছেন-‘ তোয়ারা যারা ইয়োবা ব্যবসার লই জড়িত আছ, যারা তালিকাভুক্ত আছ বা যারা তালিকার বাইরে আছ তোয়ারা সেরেন্ডার গর। আগামি পাঁচ দিনের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আঁরলয় যোগাযোগ গর । আঁই সেরেন্ডার গরাই দিয়্যুম। যা গইরজো গইরজো, আর ন গইরজো। আইয়ো বেগগুনি মিলেমিশি তওবা গরি টেকনাফের মধ্যে ইয়ান প্রমান গরা পরিবো আঁরা ইয়াবা মুক্ত অইয়ি।’
এই কথার অর্থ হচ্ছে – ‘তোমরা যারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত আছ, যারা তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্তের বাইরে আছ তোমরা আত্মসমপর্ণ করো। আগামি ৫ দিনের মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আমার সাথে যোগাযোগ কর। আমি আত্মসমপর্ণ করিয়ে দেব। যা করেছো করেছো, আর করবেনা। এসো সবাই মিলেমিশে তোয়াবা করে টেকনাফের মধ্যে এটা প্রমান করবো আমরা ইয়াবামুক্ত হয়েছি।” শুক্রবার সন্ধ্যায় টেকনাফের লামারবাজারে নিজের বাড়িতে সদ্য নমাপ্ত নির্বাচেন বিপুল ভোটে নির্বাচিত এমপি (স্ত্রী) শাহিন আকতারকে নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান বদি।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পন করতে আহ্বান জানিয়েছেন। ইয়াবা চোরাচালানে জড়িতদের আত্মসমর্পণের জন্য পাঁচ দিনের সময়ও বেঁধে দিয়ে তিনি বলেন, “উখিয়া-টেকনাফে কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ী থাকতে পারবে না। কেউ যদি আত্মসমর্পণ না করে, পরে তাদের পরিণতি ভয়াবহ হবে। টেকনাফের ছেলেহারা মা-বাবা, স্বামীহারা স্ত্রী ও বাবাহারা সস্তানদের কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ নিয়েছি।ইয়াবা কারবারিদের আতœসমর্পন প্রসঙ্গে গতরাতে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন-‘ সীমান্তের ইয়াবা কারবারিরা গত কিছুদিন ধরে আতœসমর্পন করতে এক প্রকার মরিয়া হয়ে পড়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে প্রাথমিক কথা হয়েছে।’ পুলিশ সুপার বলেন, যেহেতু কারবারিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করছে সেহেতু এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একটি বাস্তব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপার বলেন, কিছু কঠোর শর্তাবলী দিয়ে কারবারিদের আতœসমর্পণের চেষ্টা করা হবে। ইয়াবা কারবারিদের আতœসমর্পন করতে এমপি বদির আহ্বান প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার জানান, সীমান্ত এলাকার কারবারিদের পীড়াপিড়িতে হয়তোবা এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে এমপি বদি নিজেই এমন উদ্যোগে সামিল হতে চলেছেন।
ইয়াবাকারীদের উদ্দেশ্যে দশম সংসদের এই সাংসদ আরও বলেন- ‘ইয়াবা ব্যবসা করার কারণে যারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন আপনারা আত্মসমর্পন করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। আত্মসমর্পনের জন্য আমি আপনাদের পাঁচ দিন সময় দিচ্ছি। পাঁচদিনের মধ্যে ইয়াবা কারবারিরা আমার সাথে যোগাযোগ করেন, আমি আপনাদের সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করিয়ে দেব। সবাইকে মিলে টেকনাফের বদনাম ঘুচাতে হবে।’
সংসদ সদস্য বদির এ ধরনের বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এমপি বদির এমন বক্তব্যে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেককে বলাবলি করতে শুনা যায়- ‘ বদি ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পন করতে আহ্বান জানালেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের করা ইয়াবা কারবারির তালিকায় তার নাম শীর্ষে রয়েছে । তাই প্রশ্ন ওঠেছে ‘বদিকে আত্মসমর্পন করাবে কে ?’
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বদিপত্মী শাহিন আকতারের ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবা তালিকায় নাম থাকা টেকনাফের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা রফিক উদ্দীন ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মৌলানা আজিজ উদ্দীন প্রমূখ সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা ।
মতবিনিময় সভায় সংসদ সদস্য শাহিন আকতার বলেন, আত্মসমর্পণ না করলে তাদের দেশ ছাড়তে হবে। এলাকায় তাদের কোনো রেহাই নেই। কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ী এলাকায় থাকতে পারবে না। কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাদক-ইয়াবা ব্যবসাসহ সব ধরনের অপকর্ম বন্ধ করতে যা যা করণীয়, আমি তাই করব। মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।
এমপি বদির এমন বক্তব্য নিয়ে খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও নানা কানাঘুষা চলছে। টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুরা মিয়া বলেন-‘ আমাদের এমপি বদি সাহেব সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের আতœসমর্পণ করতে বলছেন এটা ভাল কথা। কিন্তু যারা হাজার কোটি টাকা এ কারবারে হাতিয়ে নিয়ে ইতিমধ্যে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে এবং এদেশে নানা স্থাপনা করেছে তাদের কি বিচার হবে ?’ তৃণমূলের এই আওয়ামী লীগ নেতা আরো বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় এমপি আবদুর রহমান বদির নাম শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এখন তাঁর ব্যাপারে কি হবে ? তবে এ বিষয়ে এমপি আবদুর রহমান বদির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা গুরা মিয়া তার ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক ষ্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন-‘জলদস্যু আর ইয়াবা বিয়ারি এক জিনিষ নয়। জলদস্যুরা দস্যুমি করে হয়ত গুটি কয়েকজনকে হত্যা করেছে কিংবা কিছু টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে সংসার চালিয়েছে। কিন্তু ইয়াবা বিয়ারিরা সমাজ সহ পুরো জাতিকে ধ্বংশ করেছে।’
প্রসঙ্গত, গত দুই মেয়াদের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সারাদেশে আলোচিত সমালোচিত। ইয়াবা কারবারে মদদ দেয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইয়াবা কারবারিদের তালিকায় তিনিসহ তার পরিবার ও নিকটাত্মীয় ২৫ জনের নাম রয়েছে। এছাড়া তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) দায়ের করা মামলায় দ- ভোগ করেন। এসব অভিযোগের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার পরিবর্তে স্ত্রী শাহিন আকতারকে দলীয় মনোনয়ন দেন এবং শাহীন আকতার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
Posted ১:০৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh