শুক্রবার ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
* হোটেলে ফেরি করে ইয়াবা ও পতিতা বিক্রি *ডেরা থেকে শতাধিক কনডম উদ্ধার

ইয়াবা ও পতিতার ডেরা থেকে কাজী রাসেল আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ইয়াবা ও পতিতার ডেরা থেকে কাজী রাসেল আটক

কক্সবাজারে পতিতা ও ইয়াবা কারবার বন্ধের ডাক দেয়ার একদিন পরেই একই ডেরায় ধরা পড়লেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসাবে পরিচয় দানকারি কাজী রাসেল আহমদ ওরফে কিং রাসেল নামের বহুল আলোচিত ‘স¤্রাট’। ওই ডেরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমানের যৌন উত্তেজক টেবলেট, যৌনকর্মীর কাপড়-চোপড় সহ শতাধিক কনডম। পুলিশ তার সাথে একজন তরুনীকেও আটক করেছে। আটক হওয়া তরুণী আসমা হুসনা মীম ঢাকার দোহারের বাসিন্দা। পুলিশের অভিযানের সময় ১০/১২ জন পতিতা সহ ১৪ জন দালাল ও খদ্দের পালিয়ে গেছে।
এদিকে সাগর পাড়ের আলোচিত কিং ধরা পড়ার খবরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকি হোটেল আর চা দোকানে কাজী রাসেল ধরা পড়ার সংবাদটিই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়ীরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন-তাদের এলাকার আতংক ধরা পড়ার জন্য। এলাকার মানুষের মুখে মুখে কেবলই আলাপ চলছে-ঢাকার যুব মহিলা লীগের মক্ষীরাণীর পর এবার ধরা কক্সবাজারের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কিং রাসেল।

আটক হওয়া কাজী রাসেল কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকার এক কালের ত্যাগি আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত কাজী তোফায়েল আহমদের কনিষ্ট পুত্র। কাজী রাসেল বিগত কয়েক বছর ধরে সাগর পাড়ের পর্যটন এলাকায় বহুল আলোচিত একজন হিসাবে আভির্ভুত হয়ে উঠেন। এমনকি সাগর পাড়ের অন্ধকার জগতের একচেটিয়া কিং হিসাবেও আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। রাজধানী ঢাকার সিটি কর্পোরেশনের ইরান নামের একজন আলোচিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাধর হিসাবে নিজেকে জাহির করারও চেষ্টা করেন। ইরান নামের ওই কাউন্সিলার কক্সবাজার বেড়াতে আসলে কাজী রাসেল কলাতলী সড়কে গেইটের পর গেইট সাঁজিয়ে তাকে বরণ করে কক্সবাজারবাসীকে তিনি বুঝাতে চান-কাজী রাসেল অনন্য এক ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
গতকাল সোমবার ভোরে কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সৈকত পাড়ার কাজী রাসেলের বাসায় আয়োজিত ইয়াবা সেবনের জলসায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানী ঢাকায় র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়ার মতই অপরাধজনক কাজে জড়িত ছিলেন কক্সবাজারে আটক হওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল। আর সারা দেশ যখন আওয়ামী যুব মহিলা লীগ নেত্রী হিসাবে পরিচয় দানকারি পাপিয়াকে নিয়ে সরগরম ঠিক তখনই একই ধরণের কর্মকান্ডে জড়িত কক্সবাজারের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয়ধারি কাজী রাসেল গ্রেফতার হন। পুলিশের অভিযানের সময় ডেরা থেকে যেসব পতিতা, দালাল ও খদ্দেরগন পালিয়েছে তারা কৌশলে ইয়াবা সহ আরো অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার সাগর পাড়ে বহু সংখ্যক পতিতালয় খুলে রোহিঙ্গা সহ কমপক্ষে দুই শতাধিক তরুণীকে আটকিয়ে রেখে পতিতাবৃত্তি করা হত। আটক হওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার দাপটে সাগর পাড়ের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও অতীষ্ট ছিলেন। সাগর পাড়ের দাপুটে নেতা হিসাবে পরিচিত কাজী রাসেলের এমন অবৈধ ব্যবসায় জড়িত রয়েছে কয়েকশ’ দালাল। এসব দালালগন হোটেলে হোটেলে ইয়াবা ও পতিতা ফেরি করেও সরবরাহ দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কাজী রাসেল তার অপরাধজনক কর্মকান্ড ধামাচাপা দিতে আরো বড় নেতাও হতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদেও দাঁড়িয়ে পরাজিত হন। এদিকে বিগত উপজেলা নির্বাচনের সময় হুমকি ধমকি দিয়ে পোষ্টার ও ব্যানার ছাপানোর কয়েক লাখ টাকাও পরিশোধ না করে উল্টো হুমকি দিয়ে যাবারও অভিযোগ উঠেছে। শহরের থানা রোডের ইভান প্লাজার ডিজিটাল কালার ল্যাব নামের প্রতিষ্টানটিতে ওই সময় কাজী রাসেল তার ব্যানার পোষ্টার ছেপেছিলেন। ডিজিটাল কালার এর মালিক মোঃ জামাল উদ্দিন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে, এখনো পর্যন্ত তিনি কাজী রাসেলের কাছে ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা পাওনা রয়েছেন। গতকাল পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরই জামাল উদ্দিন এমন অভিযোগ করার সাহস পেলেন।
কক্সবাজারের দাপুটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে-তিনি রাজধানী ঢাকার অনেক প্রভাবশালী লোকজন সহ পুলিশের কিছু অসাধূ সদস্যের সাথে সম্পর্কের অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে একাজ চালিয়ে আসছেন। কক্সবাজার লাইট হাউজ এলাকার বাসিন্দা এ ব্যক্তি একই এলাকার প্রায় ডজন খানেক হোটেল-মোটেল ভাড়া নিয়ে পতিতা ও ইয়াবার হাট বসিয়ে সেখান থেকেই সরবরাহ দিয়ে আসছিলেন অন্যান্য হোটেলে। পর্যটন এলাকায় একচেটিয়া পতিতা, ইয়াবা, ফ্ল্যাট ও প্লট দখল, হোটেল-মোটের জোনের খালি প্লটে মাছ চাষ ও চাঁদাবাজি সহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে ছিল কাজী রাসেলের।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, কক্সবাজার সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেল জোনে জমির প্লট ও ফ্ল্যাট দখল থেকে শুরু করে ফ্রিষ্টাইলে পতিতা ও ইয়াবার কারবার চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব অপরাধে জড়িত রয়েছে দু’টি বাহিনীর সন্ত্রাসী। তাও একটি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক এবং অপরটি বিএনপি সমর্থিত সন্ত্রাসী বাহিনী।
ক্ষমতাসীন দলের বাহিনীটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন আটক হওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল। অভিযোগ রয়েছে, সাগর পাড়ের পর্যটন এলাকায় পতিতা ও ইয়াবা কারবার সহ জবর দখলের অপরাধ নিয়স্ত্রণ করে আসছে বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। অপরদিকে ‘মুনিয়া বাহিনী’ নামের অপর একটি সন্ত্রাসী দলের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো ভয়ংকর অপরাধের অভিযোগ। বাহিনীটির প্রধান শহরের বাহারছড়া আবু শামার পুত্র শাহাদত হোসেন মুনিয়া হচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি’র সহযোগি সংগটন যুবদলের সাথে সম্পৃত্ত।
অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসী মুনিয়ার জেষ্ট্য বোন, কক্সবাজার জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী ও পৌরসভার কাউন্সিলর নাসিমা আকতার বকুল সন্ত্রাসী বাহিনীটির অন্যতম মদদদাতা। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের জেলা সভানেত্রী নাসিমা আকতার বকুল ও তার ভাই শাহাদত হোসেন মুনিয়া এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি সাগর পাড়ের গণপূর্ত বিভাগের সি বøকের ৬০ নম্বর প্লটটি জবর দখল করার লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে দখলবাজ সন্ত্রাসীরা পলাতক রয়েছেন। তাদেরও আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাসুম খান জানান,সাগর পাড়ের অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনে পুলিশী অভিযান শুরু করা হয় বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই। পুলিশী অভিযানের মুখে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল নিজেকে ‘পরিচ্ছন্ন নেতা’ দেখাতে শনিবার রাতে কটেজ ব্যবসায়ী সমিতির নামে একটি সভা আহŸান করেন।

এতে তিনি সমিতির সভাপতি পরিচয় দিয়ে ‘পর্যটন বান্ধব পরিবেশ সুরক্ষা’র ডাক দিয়ে বলেন, পর্যটন এলাকায় কোন পতিতা এবং ইয়াবা কারবারির স্থান হবেনা। উক্ত সভার স্বচিত্র সংবাদ স্থানীয় অনলাইন-ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আর এমন ঘটনার একদিন পর উক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী রাসেল ইয়াবার জলসা থেকে তরুণী সহ আটক হন। পুলিশ সুত্রে আরো জানা গেছে, কক্সবাজার সাগর পাড়ের পর্যটন এলাকার হোটেল-মোটেল জোনে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পরিচয়ে কাজী রাসেল নানা আপত্তিকর কর্মকাÐ করে আসছিলেন।
স¤প্রতি মোরশেদ নামের এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন রাসেল। ওই ঘটনায় মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। এর আগেও নানা অপকর্মের অভিযোগে কাজী রাসেলকে পুলিশ আটক করেছিল। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির বলেন, তরুণী সহ আটক কাজী রাসেলের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগে থানায় মামলা করে কারাগারে চালান করা হয়েছে।

মামলায় ডেরা থেকে পালিয়ে যাওয়া আরো ১৪ জন দালালের নাম এবং আরো অজ্ঞাতনামা সহ কাজী রাসেলের বাহিনী সদস্যকে আসামী করা হয়েছে। ওসি আরো জানান, তাকে আটকের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সব কিছু আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক পরবর্তীতে আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে কাজী রাসেলের জ্যেষ্ট ভাই কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোর্শেদ আহমেদ বাবু জানান, পারিবারিক কলহের একটি ঘটনার জের ধরে পুলিশ তাকে আটক করেছে। অপরদিকে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল জানিয়েছেন-‘ কোন অপরাধী দলের হতে পারে না। অপরাধ করলেই শাস্তি পেতে হবে।’ ####

Comments

comments

Posted ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com