দেশবিদেশ রিপোর্ট | শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এখন ইয়াবার ছড়াছড়ি। সীমান্তে রোহিঙ্গারাই এখন ইয়াবার পাচারকারি এবং কারবারি হয়ে উঠেছে। টেকনাফ সীমান্তের গডফাদারগণ ইয়াবা কারবারে মাধ্যম হিসাবেও ব্যবহার করছে রোহিঙ্গাদের। ইয়াবা কারবারের সাথে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানিও। রোহিঙ্গা শিবির থেকে ইয়াবা কারবারে জড়িত দফায় দফায় আটক হওয়া ইয়াবাকারবারিরাই আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
সীমান্তের ইয়াবা কারবার রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে দ্বন্ধ সংঘাতও। এমনকি বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যদের কাছে রোহিঙ্গাদের ইয়াবা কারবারের তথ্য দেয়ার সন্দেহে ইতিমধ্যে অনেক স্থানীয় বাসিন্দাদেরও নানা কৌশলে রোহিঙ্গারাই ধরে আইনে সোপর্দ্দ করছে।
গত সপ্তাহান্তে টেকনাফের জাদিমুরা এলাকার জুম্মাপাড়ার রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ স্থানীয় লেদা জুনিয়র হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত হোসেন (১৬) কে ধুরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। জাদিমুরা এলাকার দরিদ্র বাসিন্দা এজাহার মিয়ার পুত্র আরাফাত হোসেন আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যদের রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ ডাকাতের তথ্য দেওয়ার সন্দেহে কৌশলে তাকে ধরে ফেলে। এরপর ইয়াবা ও অবৈধ বন্দুক দিয়ে আরো দুই সহযোগি সহ রোহিঙ্গা ডাকাত তার লোকজন দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
টেকনাফের জাদিমুরা এলাকার বাসিন্দা এজাহার মিয়ার অভিযোগ-‘রাখাইনের রোহিঙ্গারা এপারে এসে ইয়াবা কারবারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। সেই নুর মোহাম্মদ ডাকাত ইয়াবা কারবার নিয়ে প্রকাশ্যে রয়েছে। উল্টো রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ ডাকাত আমার কিশোর স্কুল ছাত্রকে ধরে তুলে দিয়েছে পুলিশের হাতে। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশীরা রোহিঙ্গাদের হাতেই এখন অসহায়।’
এদিকে চার রাউন্ড কার্তুজ ও সাত হাজার ইয়াবা বড়িসহ দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত জহির আহমদ (৩৫)কে আটক করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ। তার নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দেশীয় তৈরি একটি এলজি, একটি একলনা বন্দুক, চারটি কার্তুজ ও সাত হাজার পিস ইয়াবা বড়ি। আটক হওয়া রোহিঙ্গা ডাকাত জহির টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের ই-ব্লকের ২০৫ নং রুমের হোছন আহাম্মদের ছেলে। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর রাতে পুলিশ রোহিঙ্গা ডাকাত জহিরকে আটক করে।
এলাকাবাসী জানান, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ইয়াবার ডিপো বানিয়ে সেখানেই গোপনে বেচাকানা চলছে। সীমান্তের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডনরা এখন তাদের কারবারের কৌশল পাল্টে রোহিঙ্গাদেরই ব্যবহার করছে। ইয়াবা কেনাকাটা ও পাচারকাজকে নির্বিঘœ করার জন্য রোহিঙ্গারা যত্রতত্র বেআইনী অস্ত্রও ব্যবহার করছে দেদারছে।
টেকনাফ থানার ওসি জানান, রোহিঙ্গা শিবির সহ সীমান্ত এলাকার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদা সজাগ রয়েছে। এক্ষেত্রে মাদক ও বেআইনী অস্ত্র উদ্ধারকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। টেকনাফ পুলিশ গত ফেব্রুয়ারী থেকে গত ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ মাসে সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২২ লক্ষ ২০ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এ সংক্রান্তে ১০২ টি মাদকের মামলায় ১৭৪ জন আসামীর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৫ জনকে। সেই সাথে উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ টি বন্দুক, ৭ টি পিস্তল সহ ৩০ রাউন্ড গুলি। এ সংক্রান্তে ২০ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত বে আইনী অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১৬ থানার মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া এবার দ্বিতীয়বারের মত রেকর্ড করেছেন। সেই সাথে কক্সবাজার জেলায় পঞ্চম বারের মত শ্রেষ্ঠ ওসি হিসাবেও জেলা পুলিশ পুরষ্কৃত করেছে টেকনাফ থানার ওসিকে।
র্যাবের ১৭ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার
অপরদিকে র্যাব -৭ টেকনাফ ক্যাম্পের সদস্যরা গতকাল পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৭ হাজার পিচ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। সেই সাথে এক নারী সহ ৩ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। গতকাল সকালে টেকনাফ পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে প্রায় ৮ হাজার পিচ ইয়াবা। ইয়াবা পাচারের দায়ে আটক করা হয়েছে টেকনাফের পুরান পল্লান পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহমানের পুত্র আবদুর রাজ্জাক (২৩ কে।
এদিকে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর বাজারের মোবারক মেডিকেল ষ্টোর সংলগ্ন এলাকায় র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে একটি সিএনজি ট্যাক্সী আটক করে। উক্ত ট্যাক্সিটি টেকনাফ থেকে কক্সবাজার শহরে আসছিল। সিএনজি ট্যাক্সি তল্লাশী করে প্রায় ৯ হাজার পিচ ইয়াবা সহ এক নারী সহ ২ পাচারকারীকে আটক করা হয়। আটক নারী পাচারকারী হালিমা আকতার (২৯) ও মাহমুদুল হক (২৩) টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা। #####
Posted ১:৩০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh