দেশবিদেশ রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮
‘ইবা এন্ডিলা ক্যান নির্বাচন ? এন্ডিলা নির্বাচনতো আর ন-দেখি। ৩০ তারিখ আঁরা আরো কি দেইক্ষ্যম কইত ন পারি।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন পথে-ঘাটে এরকম প্রশ্নই মুখে মুখে ফিরছে। ভোট অবশ্যই হবে-এটা সবাই বিশ্বাস করেন। কিন্তু কিভাবে হতে চলেছে-এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজছে সবাই। তবে সঠিকভাবে এরকম জবাব কারো পক্ষেই দেয়া সম্ভব নয়।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় এক রিক্সা চালক জানতে চান-ভোটের হালচাল নাকি তিনি কিছুতেই বুঝছেন না। বুঝছেন না প্রার্থীরা এবারের ভোটের প্রচারণা নিয়ে মরিয়া হয়ে নামছেন না কেন ? কেনইবা ঘরে ঘরে ভোট চাইছেন না প্রার্থী বা প্রার্থীর লোকজন ? রিক্সা চালকের মন্তব্য- আসলে এবার অন্য রকম এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে।
কক্সবাজার আদালত ভবনে মামলা-মোকদ্দমার কাজে আসা এক ব্যক্তি গতকাল বলেন-এবারের নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির শিকার হচ্ছে রাজনৈতিক দলের আদর্শ। গ্রাম-গঞ্জের আদর্শিক নেতারা এখন বড়ই অসহায়। বিপুল সংখ্যক আদর্শিক নেতা-কর্মী এক অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে বসে আছেন। তাদের কি হবে ? এসব আদর্শিক নেতাদের নিয়ে দলীয় প্রার্থীর গণসংযোগ ছাড়াই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্টিত হবে।
সেই নির্বাচনে আদর্শিক নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রতীকে ঠিকই ভোট প্রদান করবেন। কিন্তু তবুও কথা থেকে যাবে। কেননা দলীয় প্রার্থী অপছন্দের কারন সহ নানা মান-অভিমানকে কেন্দ্র করে প্রার্থীকে নিয়ে গণসংযোগ সহ জনসভা না করায় সেইসব আদর্শিক নেতা-কর্মীরা ভোটের পর পরিণত হবেন ‘নির্বাচিত এমপি’র এক নম্বর শত্রু।’
এদিকে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর সাথে দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের সভা-সমাবেশে সহ গণসংযোগে অনুপস্থিতির সুযোগে প্রার্থীর পক্ষে কাজের সুযোগে ঢুকে পড়ছেন চরম আওয়ামী বিদ্বেষী লোকজনও। এমনকি ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল দিনগুলোতে যেসব আওয়ামী বিদ্বেষীরা আদর্শিক আওয়ামী লীগারদের অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল আজ তারাই দলে দলে ঢুকে পড়ছে প্রার্থীর সাথে। দলে ঢুকে পড়ছে ২০১৩-২০১৪ সালের আগুন সন্ত্রাসীরাও। দলে ঢুকছে অনেক নাশকতা মামলার আসামীরাও। তাই রাগে-ক্ষোভে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন-‘ইবা এন্ডিলা ক্যান নির্বাচন ?’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বার বার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন-এরকম আওয়ামী বিদ্বেষীদের কোনভাবেই দলে না ঢুকানোর জন্য। কিন্তু দলীয় সভানেত্রীর এরকম কথা বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। নির্বাচনে একদিকে জেতার তাগিদ রয়েছে অন্যদিকে নির্বাচনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মী ছাড়াও জেলার নানা অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত লোকজন সহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও অবাধে অনুপ্রবেশ করছে দলীয় প্রার্থীর বগলে।
এমনকি একাত্তরের দন্ডিত যুদ্ধাপরাধীর দেহরক্ষীর পর্যন্ত স্থান হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি রাজনৈতিক দলে। অথচ সেই যোগদানকারি ব্যক্তিও বলছে উল্টো কথা। অভিযোগ রয়েছে-এ ব্যক্তি এখন দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে। ৩০ ডিসেম্বরের ফলাফলের উপরই তিনি দলে যাবেন বা না যাবেন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। এ কারনে ডজন ডজন ত্যাগী দলীয় নেতা-কর্মীও মান-অভিমান নিয়ে রয়েছেন। কেননা এই ব্যক্তি গত ১০ বছর ধরেও চরম আওয়ামী বিদ্বেষী হয়েও ক্ষমতাসীনদের সাথে থেকে মজা খাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে একযুগে ধর্ষণ-হত্যা ও ঘরবাড়ীতে আগুন দেয়া চিহ্নিত পরিবারের দুর্ধর্ষ সদস্যরাও দলীয় এমপি প্রার্থীর সাথে এখন ভোট চাইছেন। একাত্তরের দিনগুলোতে এমন ঘৃণিত পরিবারের এসব সদস্যদের দেখেও অনেক ত্যাগী এবং দেশপ্রেমিক দলীয় আদর্শিক নেতা-কর্মীরাও আজ মনের কষ্টে নিরবে প্রার্থী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব কারনেই এলাকায় ব্যথিত লোকজন প্রশ্ন করছেন-‘ইবা এন্ডিলা ক্যান নির্বাচন ? এন্ডিলা নির্বাচনতো আর ন-দেখি।’
Posted ২:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh