লিটন কুতুবী, কুতুবদিয়া | সোমবার, ১১ জুন ২০১৮
বিগত সাত বছর ধরে রেড়িবাঁধ না থাকায় মারাতœক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দ্বীপের লক্ষাধিক মানুষ। অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে কয়েক হাজার একর চাষাবাদের ফসলি জমি। জোয়ারের সময় ঘরের আঙিনাসহ পুকুর ভিটি ভরে যায়। এসব এলাকার লোকজনের এমন অর্থ ভিত্ত নেই যে অন্যত্রে গিয়ে মাথা গোজানোর ঠাই করার মতো । অমাবস্যা আর পূর্ণিমার জোয়ারে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ঐ সপ্তাহে ঘরে থাকা যায় না। জোয়ার ভাটার কারণে এসব গ্রামগুলোর মানুষ পানি আর বায়ুবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। চলতি বর্ষা মৌসুমে কয়েক হাজার একর ফসলি জমিতে চাষাবাদের আশা ছেড়ে দিয়েছে কৃষকেরা। কুতুবদিয়া বাচাঁও আন্দোলনের সদস্য এডভোকেট আইয়ুব হোছাইন জানান,বিগত ২০১২ সনে ঘূর্ণিঝড় আয়লা ও তার পরবর্তী ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু,মোরার আঘাতে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপকূলের কাইছারপাড়া,নয়াকাটা,পশ্চিম চরধুরুং,পূর্ব চরধুরুং,পূর্ব তারলেররচর,আনিচের ডেইল,এলাকায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় ঐসব গ্রামের ওপর জোয়ার ভাটা বসার দৃশ্যটি চোখে পড়ে প্রতিনিয়তই।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনের কক্সবাজার জেলার ৭১ পোল্ডার বেড়িবাঁধ এলাকার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের পূর্ব চরধুরুং,পশ্চিম চরধুরুং, কাইছারপাড়া, নয়াকাটা,আকবরবলীপাড়া, ফয়জানিরবাপের পাড়া, সতরউদ্দিন এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছর ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। কিন্তুু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেরামতের ১০% কাজ সমাপ্ত করে কাজ বন্ধ রাখে। ভাঙ্গন বেড়িবাঁধ এলাকায় মেরামত কাজ শেষ না করায় ২০কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। বিগত সাত বছর ধরে বাঁধ ভাঙ্গা থাকায় লোকালয়ে বর্তমানে জোয়ার ভাটা বসেছে। এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, বিগত সাত বছর ধরে কুতুবদিয়া দ্বীপের ২০ কিলোমিটার বাঁধ ভাঙ্গা থাকায় উত্তর ধুরুং এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নয়াকাটা, চরধুরুং,কাইছারপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় প্রতিনিয়তই এসব এলাকায় জোয়ারভাটা বসেছে। যার ফলে কয়েক হাজার একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ,স,ম শাহরিয়ার চৌধুরী জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ চরধুরুং আকবরবলীপাড়া, ফয়জানিরবাপের পাড়া, সতরউদ্দিন, কাইছারপাড়া এলাকায় ০৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ার ভাটার কারণে কয়েক’শ একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না।
বর্তমানে আকবরবলী পাড়া আর চরধুরুং এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ না থাকায় ঐ এলাকা দিয়ে জোয়ারের নোনা পানি ঢুকে শত শত একর ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন তাদের জন্মস্থান রক্ষার জন্য এলাকা ভিত্তিক নিজ শ্রমে মাটি কেটে জোয়ার ঠেকানোর জন্য রিং বাঁধ দিলেও তা রক্ষা পাচ্ছে না। উত্তর ধুরুং কাইছার পাড়ার জোৎনা বেগম (৩৫) জানান, সে দুই ছেলে তিন কন্যার সন্তানের জননী। বিগত ৫ বছর পূর্বে ঘূর্ণিঝড়ে তার ভিটিঘর ভেঙ্গে যায়। নিরুপায় হয়ে কুতুবদিয়া ত্যাগ করে চকরিয়া হারবাং পাহাড়ের ঢালে পলিথিনের চাউনি দিয়ে বসবাস করছি। একই দৃশ্য বিধবা জোহরা খাতুনের বেলায়ও দেখা গেছে। বর্তমানে ঘরভিটি হারিয়ে আজম সড়কের পাশে মশারি টাঙিয়ে রাত্রি যাপন করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কুতুবদিয়া উপজেলার শাখা কর্মকর্তা এলটন চাকমা সাথে ভাঙন রেড়িবাঁেধর ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, গত বর্ষা মৌসুমে রিং বাঁধ দেয়ার জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় কুতুবদিয়া উপকূলের ১৪ কিলোমিটার বাঁধ সিসি ব্লক দ্বারা স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামত করার জন্য ৯২ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর জানান, তাবলরচর, চরধুরুং, কাইছারপাড়া এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ না থাকায় বিগত সাত বছর ধরে প্রায় হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি আর শত শত একর লবন উৎপাদনের মাঠ অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে। এসব এলাকার প্রান্তিক চাষীদের গেল ছয় বছরে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে প্রান্তিক চাষীদের পরিবারে চরম দূর্ভোগ নেমে এসেছে। আনিচের ডেইল গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবু ফয়েজ জানান, বিগত চার বর্ষা আর চার শুস্ক মৌসুমে এ এলাকায় চাষাবাদ হয়নি। বেড়িবাঁধ না থাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমেও ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে না। চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
Posted ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh