সুপার ফোরে উঠতে ৫৫ রানে জয় পাওয়া দরকার ছিল বাংলাদেশের। বাংলাদেশ জিতল তার চেয়ে আরও বড় ব্যবধানে। আর এই জয়ে গতবারের আক্ষেপকে বিদায় করে সুপার ফোরে বাংলাদেশ।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট-বলে আফগানদের পাত্তা না দিয়ে গ্রুপ টেবিলে এমন অবস্থানে পৌঁছেছে বাংলাদেশ, যেখান থেকে আর বাদ পড়া সম্ভব নয় । অর্থাৎ আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কার ম্যাচে যা-ই ফলাফল হোক না কেন, বাংলাদেশের সুপার ফোর আটকাবে না তাতে।
আফগানদের বড় ব্যবধানে হারালেও পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠেনি বাংলাদেশ। কারণ সমান এক ম্যাচ জেতা শ্রীলঙ্কার নেট রান রেট সাকিবদের চেয়ে বেশি। তবে সাকিবদের এখন যা অবস্থান, সেখান থেকে বাদ পড়া সম্ভব নয়। ব্যখ্যাটা অবশ্য একটু জটিল।
শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জিতলে সমীকরণ সহজ। বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা উঠবে সুপার ফোরে। আফগানিস্তানের সুপার ফোরে উঠতে হলে জিততে হবে বড় ব্যবধানে। যদি কোনোভাবে তারা সেই বড় ব্যবধানে জিতেও যায়, তাহলে নেট রান রেটে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়ে নিচে নেমে যাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান খেলবে সুপার ফোর। আর শ্রীলঙ্কাকে যদি কম ব্যবধানে হারায় আফগানরা, তাহলে সুপার ফোরে উঠবে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা।
টস জিতে শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার মিরাজ এবং নাঈম শেখ শুরু থেকেই আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছেন। তাতে প্রথম তিন ওভারেই রান আসে ৩০ রান।
ধীরে ধীরে রানের গতি কিছুটা কমলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই রেখেছিল বাংলাদেশ। ৮ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫০ রান। সাত ম্যাচ পর ওপেনিং জুটিতে ৫০ দেখল বাংলাদেশ।
দশম ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মুজিব-উর-রহমান। ৩২ বলে ২৮ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন নাঈম শেখ। পরের ওভারে আউট হন তাওহীদ হৃদয়। নিজের খেলা দ্বিতীয় বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয়।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর হাল ধরেন শান্ত এবং মিরাজ। রশিদ খান-মোহাম্মদ নবিদের বিপক্ষে দাপুটে ব্যাটিং করে দুজন মিলে গড়েন ১৯৬ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত হাতে ব্যথা নিয়ে মিরাজ মাঠ ছাড়লে ভাঙে সেই জুটি। ১১৯ বলে ১১২ রান করে শেষ পর্যন্ত রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ।
বন্ধুর বিদায়ের পর শান্তও ফেরেন দ্রুত। ১০৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে রান আউট হন তিনি। ৯ চার ও ২ ছয়ের ইনিংসে স্ট্রাইক রেটও ছিল দারুণ।
শান্ত-মিরাজের বিদায়ের পর হাল ধরেন মুশফিক সাকিব। দুজনেই খেলেন গুরুত্বপূর্ণ দুই ক্যামিও ইনিংস। রান আউট হওয়ার আগে ১৫ বলে ২৫ রান করেন মুশফিক। সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৩২ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন টাইগার অধিনায়ক।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়েছেন শামীম পাটোয়ারী। ৬ বলে ১১ রান করে রান আউট হয়েছেন তিনি। ৩ বলে ৪ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন আফিফ।
৩৩৫ রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই ভয়ঙ্কর ব্যাটার রহমতউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। তবে এরপর থেকেই দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন রহমত শাহ এবং ইব্রাহিম জাদরান। দ্বিতীয় উইকেটে ইব্রাহিম-রহমত মিলে গড়েন ৭৮ রানের জুটি।
সাকিব-হাসানদের বাইন্ডারিছাড়া করে যখনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল এই জুটি, তখনই ব্রেকথ্রু এনে দিলেন তাসকিন আহমেদ। রহমতকে বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান ডানহাতি এই পেসার।
৩৩ রান করে রহমত ফেরার পর হাশমতউল্লাহ শাহিদীর সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম। ৭৫ রান করা এই ব্যাটার ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন বাংলাদেশি বোলারদের জন্য। এরই মধ্যে হাসান বোলিংয়ে এসে ফেরান ইব্রাহিমকে। ৭৪ বলের ইনিংসে ১০ চারের পাশাপাশি একটি ছক্কা মেরেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
পরের উইকেটেও বড় জুটি গড়ে আফগানরা। অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে গড়েন ৬২ রানের জুটি। তাতে ৩৬ ওভার পর্যন্ত ভালোভাবেই ম্যাচে ছিল আফগানরা। কিন্তু এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশি বোলারদের দাপট। ২৫ বলের ব্যবধানে আফগানিস্তানের ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন তাসকিন-শরিফুলরা।
৪ উইকেটের মধ্যে দুটিই গেছে শরিফুলের ঝুলিতে। হাশমতউল্লাহ শহীদি এবং গুলবাদিন নায়েবের উইকেট নিয়েছেন তিনি। মোহাম্মদ নবিকে ফিরিয়েছেন তাসকিন। আর মিরাজ নিয়েছেন নাজিবুল্লাহ জাদরানের উইকেট।
শেষদিকে রশিদ খান ক্যামিও ইনিংস খেললেও তাসকিনের বলে তিনি আউট হলে শেষ হয় আফগানদের ইনিংস। ডানহাতি এই পেসার সাজঘরে ফিরিয়েছেন মুজিব-উর রহমানকে। তাতে তাসকিনের কৃতিত্ব অবশ্য অল্পই। বল উড়িয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে হিট আউট হয়েছেন মুজিব।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। শরিফুল পেয়েছেন তিন উইকেট। একটি করে উইকেট গেছে হাসান মাহমুদ এবং মিরাজের ঝুলিতে।
Comments
comments