দেশবিদেশ রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই ২০১৮
এবার মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবেই সরাসরি সন্মানী ভাতা পৌঁছে যাবার কর্মসুচি শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সীমান্ত জেলা কক্সবাজার থেকেই শুরু হল সরকারের এমন গণমুখি কর্মসুচি। গণভবন থেকে কক্সবাজারের সাথে অনুষ্টিত সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এ কর্মসুচির উদ্ভোধন ঘোষণা করলেন। জি-২ পি অর্থাৎ সরকার থেকে জনগনের নিকট সরাসরি টাকা পরিশোধ বিষয়ক ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা এবার সন্মানী ভাতা পাবেন নিজের ব্যাংক হিসাবে। এমনকি এ পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমেই সন্মানী ভাতার তথ্যও জানিয়ে দেয়া হবে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কর্মসুচি ঘোষণার পর পর অনুষ্টানস্থলেই কক্সবাজারের বয়োজ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী ব্যাংকিং বুথ থেকে সন্মানী ভাতার নগদ টাকা পেয়ে যান। এরপর তিনি হাতে নগদ টাকা দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এসময় মুক্তিযুদ্ধকালীন বিএলএফ’র কমান্ডার সত্তোরর্ধ মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি অনেক কিছু বলতে চান কিন্তু আবেগে আপ্লুত হওয়ায় বলতে পারেন না।
ভিডিও কনফারেন্সে কক্সবাজারের মুক্তিযোদ্ধারা প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন-‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ১৫ আগষ্ট ট্র্যাজেডির পর এদেশে এসে প্রধানমন্ত্রী না হলে আমরা এদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতাম। এমনকি আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশদ্রোহী হয়ে ফাঁসির কাষ্ঠেই ঝুলতে হত। আপনি দেশে ফিরে সরকার গঠণ করায় আজ আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্মান নিয়ে বেঁচে রয়েছি।’ মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, আপনি জাতির জনকের কন্যা। আপনিই পারেন-আপনিই পারবেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আস্থা রাখুন আপনি।
গতকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে কক্সবাজারে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি আলাপনে মুক্তিযোদ্ধাদের তরফে মতবিনিময় কালে কক্সবাজারের মুক্তিযোদ্ধা নেতা নুরুল আবছার এমন মন্তব্য করেন। মুক্তিযোদ্ধা নেতা নুরুল আবছার বলেন, জাতির জনকের আহ্বানে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘ ৯ মাস ধরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের মাত্র হাতে গুনা কতিপয় পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসীরা সেই চেতনাকে নস্যাৎ করে দিতে পারেনা।
গণভবনের সাথে এ প্রান্তে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত ভিডিও কনফারেন্স পরিচালনা করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। জেলা প্রশাসক এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন-‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং আপনার (প্রধানমন্ত্রী) স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় এলাকা হচ্ছে কক্সবাজার। এ জেলায় রয়েছেন সন্মানী ভাতাভোগী তালিকাভুক্ত ৩৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা। কক্সবাজার থেকে এমন কর্মসুচি শুরু করায় এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।’ অনুষ্টানে জেলা প্রশাসক কক্সবাজারের ৪১ জন মুক্তিযোদ্ধার হাতে এটিএম কার্ড তুলে দেন।
ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকেই উৎসর্গ করা হোক। কামাল হোসেন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর নিকট, পবিত্র হজ্ব পালনের সহযোগিতা চাইলে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধার দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন।
প্রসঙ্গত সরকার বর্তমানে মুক্তিযোদধাদের মাসিক ১০ হাজার টাকা করে সন্মানী ভাতা দিয়ে আসছেন। সেই সাথে দুই ঈদে ১০ হাজার টাকা করে উৎসব ভাতা ছাড়াও বৈশাখী ভাতা ২ হাজার টাকা ও ৫ হাজার টাকা করে বিজয় ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৮ জন রয়েছেন তারিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। তন্মধ্যে ভাতা পেয়ে আসছেন এক লাখ ৮৬ হাজার ৪০৪ জন মুক্তিযোদধা। পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই মুক্তিযোদধারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজের ব্যাংক হিসাবে ঘরে বসেই পাবেন সন্মানী ভাতা।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্টানে ভিডিও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে দাঁড়ানো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সাবেক আমলাদের এক হাত নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “যারা আলোচনা করেন, মন্তব্য করেন, তাদের না হাই কোর্ট সম্পর্কে জ্ঞান আছে, না আপিল বিভাগের কোনো রায় সম্পর্কে ধারণা আছে।ৃ তারা সেগুলো বেমালুম ভুলে যান।”
কোটা সংস্কার নিয়ে বিএনপি যখন কিছু বলে, তখন তা আমলে না নিলেও শিক্ষকদের ‘ভুল’ মানতে কষ্ট হয় বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “বিএনপি যখন বলে, তখন আমি কিন্তু মনে করি না। যত বড় ব্যারিস্টার হোক, আর জ্ঞানীই হোক; তারা তো মিথ্যা কথা বলায় পারদর্শী। তারা তো বলবেই। তাদের কথায় কিছু আসে যায় না।
“আমাদের সমাজের যারা শিক্ষিত, যারা শিক্ষক; তারা এ ধরনের ভুল কী করে করেন! আমি বলেছি যে আপিল বিভাগের নির্দেশ আছে, শূন্যস্থান মেধা তালিকা থেকে পূরণ হবেৃ।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটাই আর তিনি রাখবেন না।
কিন্তু গত সপ্তাহে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ওই কোটা বহাল রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
কক্সবাজারন প্রান্তের অনুষ্টানে কক্সবাজারের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, স্থানীয় এমপি সাইমুম সরেয়ার কমল, এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, এমপি মোহাম্মদ ইলিয়াছ’ এমপি খোরশেদ আরা হক ও এমপি আবদুর রহমান বদি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা সহ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য পেশাজীবিরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশবিদেশ /১৮ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১১:৪৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh