শহীদুল্লাহ কায়সার | শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৮
আজ বিজয়া দশমী। পাঁচ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার শেষ দিন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শোক আর শ্রদ্ধায় বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দেবে ‘মা’ দুর্গার প্রতিমা। অসুরের দমন করে শিষ্টের পালনের মাধ্যমে ‘মা’ দুর্গা মঙ্গলময় করবেন জীবনের প্রতিটি ক্ষণ। সেই প্রত্যাশায় শুরু হবে জীবন।
চলতি বছর জেলাব্যাপী ৩০১টি ম-পে দুর্গাপূজা করা হয়। যার মধ্যে প্রতিমা পূজা করা হয় ১৪০ টিতে এবং ঘটপূজা ১৬১টিতে। চকরিয়া ১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হয় দুর্গাপূজা। যা আজ ১৯ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। উৎফুল্লতার মাধ্যমে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রী জেলার দরিদ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপহার হিসেবে দেন ৫ কোটি টাকা। সরকারিভাবে ১৫০ টন চাল দেয়া হয় ম-পগুলোর নেতৃবৃন্দের কাছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরাও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
আজ বিসর্জন উপলক্ষে কক্সবাজার শহরের লাবণি পয়েন্ট সংলগ্ন সৈকতে বসবে লাখো মানুষের মিলনমেলা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিমাসহকারে বিপুল সংখ্যক মানুষ যোগ দেবেন বিসর্জন অনুষ্ঠানে। মুখরিত করবেন সৈকতের লাবণি পয়েন্ট। দেশের সর্ববৃহৎ বিসর্জন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা।
বিপুল সংখ্যক মানুষের ভীড়ে যাতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে। সে ব্যাপারে তৎপর প্রশাসন। গড়ে তোলা হবে পুলিশ-র্যাব-আনসারের সহযোগিতায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে বিসর্জন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার কড়াকড়ির বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বিসর্জন অনুষ্ঠানে ব্যাগসহ ভারী কোন যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশি করা হতে পারে বলেও জানা গেছে। গতকাল ছিলো মহানবমী। নবমীর দিনে কক্সবাজার শহর সহ পুরো জেলাব্যাপী আনন্দ-উল্লাসে মেতে ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সন্ধ্যার পর থেকে শহরের ম-পগুলো ছিলো লোকে-লোকারণ্য। উৎফুল্ল চিত্তে সবাই প্রবেশ করেছে ম-পে। আরাধনা করেছে ‘মা’ দুর্গার। রাত সাড়ে আট টায় জেলাপ্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন স্বস্ত্রীক পরিদর্শন করেন স্বরস্বতিবাড়ির পূজাম-প। স্থানীয় রাজনীতিবিদগণও পরিদর্শন করেছেন ম-প। বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়ে তাঁরা ম-পগুলো পরিদর্শন করেন।
গতকাল সন্ধ্যায় শহরের ম-পগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ম-পগুলোতে বিপুল সংখ্যক পূণ্যার্থীরা আগমন। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউই বাদ যায়নি। কেউ এসেছেন দল বেঁধে। আবার কেউ এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। রমনীদের সবার পরনে ছিলো বাঙ্গালির ঐতিহ্যবাহী শাড়ি। শিশুরা এসেছিলো নতুন জামা পরে। পূজার আনন্দে সবাই হয়ে গিয়েছিলেন একাকার।
গতকয়েক বছর ধরে ম-পগুলোতে লেগেছে আধুনিকতার স্পর্শ। ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোল এখন আর তেমন দেখা যায় না। সেই স্থান দখল করেছে আধুনিক শব্দযস্ত্র। চলতি বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শহরের প্রায় সব ম-পেই এখন ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম। ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমের পাশাপাশি ম-পগুলোতে স্থান পেয়েছে বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা। সাউন্ড সিস্টেম আর লাইটিং এর সাহায্যে ম-পগুলোকে সাজানো হয়েছে অপরূপ সাজে। তবে, কিছু সময়ের জন্য ঢাক-ঢোলের ব্যবহার করা হয়।
শুধু ম-প নয়। ম-প সংলগ্ন সড়কগুলোও সজ্জিত করা হয়েছে আধুনিক আলোকসজ্জা দিয়ে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। এই ্আলোকসজ্জার কারণে শহরের অবয়বে কিছুদিনের জন্য এসেছে পরিবর্তন। সন্ধ্যার পর ম-প এবং ম-প সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্যে সকলেই মুগ্ধ।
এদিকে, শারদীয় দুর্গাপূজার কারণে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থায় আনা হয়েছে পরিবর্তন। গতকাল থেকে যানজটসহ যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে মানুষকে বিকল্প সড়ক ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়। আইনÑশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ-র্যাব এবং আনসারের সহায়তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যুহ গড়ে তোলা হয়। নিরাপত্তায় পুরুষের পাশাপাশি নিয়োজিত থাকেন নারী সদস্যরা।
Posted ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh