শুক্রবার ২রা জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
হেপাটাইটিস বি ও সি সম্পর্কে আমরা কতটা সচেতন?

আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস

এফ এম সুমন   |   শনিবার, ২৮ জুলাই ২০১৮

আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস

আজ ২৮ জুলাই বিশ্ব পোটাইটিস দিবস। কিন্ত এই রোগ নিয়ে আসলেই আমরা কতটা সচেতন? হেপাটাইটিস বি বা সি হলো বর্তমান বিশ্বের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। দিন দিন এই রোগে আক্রান্তের এর সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন সুত্র বলছে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। বিশ্বে ও যার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সর্বশেষ গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত, এদের মধ্যে পুরুষ প্রায় ৫৭ লাখ এবং নারী ২৮ লাখ। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী আক্রান্ত যুবক-যুবতীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ এবং সন্তান দানে সক্ষম নারীর সংখ্যা (১৮ থেকে ৪৫ বছর) ১৮ লাখ। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে তরুণ ও যুবকরাই এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত। এদের মধ্যে কিশোরদের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। সর্বশেষ গবেষণামতে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তের হার ০.২ শতাংশ; অর্থাৎ প্রতি ৫০০ জনে ১ জন হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। আগের গবেষণাসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করলে দেখা যায় এ হার ০.২ থেকে ১ শতাংশ। কিন্ত আমাদের মতো দেশে রোগটি যেভাবে বাড়ছে দিনদিন কিন্ত আমরা আসলেই এ রোগ সম্পর্কে আমরা কতটা সচেতন? নিজের কথা দিয়ে শুরু করতে চাই গত ২ বছর আগে আমার ভাইয়ের রক্ত পরিক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়ে সে হেপাটাইটিস বি’তে আক্রান্ত ।

বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আমরা ঘাবড়ে পড়ি, একেক মানুষ একেক পরামর্শ দিচ্ছেন ,কেউ বলছেন কবিরাজ বা বৈদ্যের সরনাপন্ন হতে। তবে যে জিনিসটা লক্ষ্য করলাম আসলে এই রোগটি বিষয়ে শহরে কিরকম তা জানিনা তবে গ্রামে বলতে গেলে রোগটি সম্পর্কে মানুষের ধারনা খুবই কম। এমনকি রোগটির সংক্রামক কিনা, বা রোগটি কেন হয় এটি থেকে বাচাঁর কি উপায় রয়েছে তা সম্পর্কে আমরা একদম নতুন। পরে আমরা এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করি তিনি এই রোগ সম্পর্কে আমাদের ধারনা দেন। তিনি বলেন আসলে রোগটি রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। বা মানব দেহের তরল পদার্থ দিয়ে ছড়ায়। বর্তমানে আমার ভাই ঢাকার একটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে রেষ্টে আছে। আশা করছি ইনশাআল্লাহ সে সুস্থ হয়ে যাবে। তবে মনে হচ্ছে চিকিৎসা অনেটা ব্যায়বহুল ও সময় সাপেক্ষ্য। রোগটা বিষয়ে আপনাদের স্পষ্ট ধারনা দেয়া দরকার। হেপাটাইটিস একটি সংক্রামক রোগ।

এটি যকৃত (খরাবৎ) এর রোগ। হেপাটাইটিস সাধারণত এটি পাঁচ প্রকারের হয় – এ, বি, সি, ডি, ই । অন্যগুলো থেকে হেপাটাইটিস বি এবং সি বেশী ভয়ংকর । এই দুটিই মৃত্যুর কারন হয়ে যেতে পারে। আবার লিভারের একেবারে কর্মক্ষমতা নষ্ট এবং লিভার ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগের লক্ষণ হল হলুদ রং হয়ে যাওয়া চোখের, প্রসাবের বা ইউরিনের রং হলুদ, শরীরে চুলকানি, শরীরে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা ইত্যাদি । হেপাটাইটিস হওয়ার পর চিকিৎসকের কাছে গেলে সে কিছু পরীক্ষা করার মাধ্যমে দেখেন রোগীর শরীরের হেপাটাইটিস জীবাণুগুলো সক্রিয় নাকি নিষ্ক্রিয়। লিভার কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই দুটি রোগই একই ভাবে ছড়ায় যেমন ১। রোগ বহনকারী রক্ত শরীরে প্রবেশ করলে । ২। জীবাণুবাহী খাবারের গ্রহনে । ৩। রোগ বহন শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ৪। মাদক দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে । জন্ডিসের প্রধান কারন রক্তে বিলিরুবিন নামক একটা রঞ্জক পদার্থ বেড়ে গেলে সেটাকে জন্ডিস বলা হয়। জন্ডিসের বিভিন্ন কারনের মাঝে একটি হেপাটাইটিস। এছাড়া লিভারের কোন রোগের উপসর্গ । অনেক চিকিৎসক জন্ডিসকে রোগ না বরং রোগের উপসর্গ বলে থাকেন । তাহলে এবার আমরা কিভাবে এই রোগ থেকে বাচঁবো। এ রোগ থেকে আমাদের বাচতে হলে প্রথমে আমাদের যে জিনিসটা দরকার তা হলো সচেতনতা । আমরা এ রোগটি সম্পর্কে সচেতন হবো।

এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের (৩০৮৭) তম পর্বে কথা বলেছিলেন ডা. এ কে এম শামসুল কবীর। বর্তমানে তিনি হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মেডিসিন ও লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কমরত। এই ধরনের সমস্যায় লোক আক্রান্ত হয়ে গেলে, কী করতে হবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে সি ভাইরাসের কথা বলি। সি ভাইরাস হলো নীরব ঘাতক। ঢোকার কমপক্ষে পাঁচ বছর পর দেখা গেছে, মানুষের লিভার সিরোসিস হয়ে গেছে। তাই সি ভাইরাসের কখনো কখনো লক্ষণ থাকে না। লক্ষণ প্রকাশ পায় তখনই যখন কিছু করার থাকে না। লিভার সিরোসিস, দীর্ঘমেয়াদি লিভারের রোগ বা লিভার ক্যানসার হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কী হবে, হাত-পা ফুলে যাবে, জন্ডিস হবে, রক্তবমি হবে, রক্ত পায়খানা হবে। মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাবে। ভুল বকবে। আর লিভার ক্যানসার হলে তো কথাই নেই। বি ভাইরাসের ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব জ্বর আসা, পেট ব্যথা করা এগুলো হয়। দুটো ভাইরাসের ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। সমস্যা হলো, কোনো মানুষ রক্ত পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন, রক্ত পরীক্ষা করা হলো, বি ভাইরাস বা সি ভাইরাস থাকলে পরে খারাপ কিছু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না, দেখতে হবে। অনেক সময় মানুষ বিভ্রান্তির কারণে আবেগ প্রবণ হয়ে, অনেকে বিভ্রান্তিপূর্ণ চিকিৎসা করেন।

এর হারবাল চিকিৎসা রয়েছে। যার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। অনেক শিক্ষিত লোকও কিন্তু আমরা অপচিকিৎসকের কাছে চলে যাচ্ছি। চিকিৎসা নিচ্ছি, ভাবছি যে বোধ হয় ভালো হয়ে গেল, পরে দেখা গেল যখন জটিলতা হচ্ছে, তখন তারা আমাদের কাছে আসছে। এই জন্য আমাদের রোগটা সঠিকভাবে নির্ণয় করে চিকিৎসা দিতে হবে। তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কীভাবে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রথমে দেখার চেষ্টা করি, যে ভাইরাসটা সক্রিয় না কি নিষ্ক্রিয়। যদি ভাইরাসটা নিষ্ক্রিয় থাকে, তাহলে নিয়মিত ফলোআপ করতে হয়। ভাইরাসটা অনেক সময় নিষ্ক্রিয় থাকতে থাকতে সক্রিয় হয়ে যায়। আজকে আপনার দেহে হয়তো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। আজ থেকে তিন বছর পর হয়তো শারীরিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সক্রিয় হয়ে গেল। এই জন্য চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। আর যদি ভাইরাস সক্রিয় থাকে, তখন আমরা দেখার চেষ্টা করি ইতিমধ্যেই তার লিভার সিরোসিস হয়ে গেছে কি না।

যদি হয়ে থাকে তাহলে ভাইরাসকে নির্মূল করার চিকিৎসা, এর জন্য অনেক ওষুধ যেটা আমাদের দেশে অনেক সফলতার সঙ্গে তৈরি হচ্ছে। চায়না, তাইওয়ান বিভিন্ন দেশ আমাদের ওষুধ ব্যাপকমূল্যে কিনে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে, ইউরোপে যে ওষুধগুলো পাওয়া যায় সব আমাদের দেশে রয়েছে। তাই কোনোভাবে বিভ্রান্ত হয়ে অন্য দেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। চিকিৎসা আমরা এভাবেই করি। আমরা দেখার চেষ্টা করি, ভাইরাসটা সক্রিয় না কি নিষ্ক্রিয়। কোন পর্যায়ে রয়েছে লিভারের রোগ। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে থাকি। তবে বলা যায় এখনি সচেতন হতে হবে আমাদের এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সামাজিক গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের ও উচিৎ হবে এব্যাপারে আরো জরুরী প্রদক্ষেপ নেয়া। এবং সরকারী প্রায় সকল হাসপাতালে ও ক্লিনিকে এই হেপাটইিটিস ভাইরাসের টিকা দেয়া হয়। এখনো যারা টিকা দেননি আসুন সবাই পরিক্ষা করে টিকা দিই সুস্থ থাকি। হেপাটাইটিস মুক্ত থাকি।

লেখক
এফ এম সুমন
গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক কর্মী
ভসংড়সঁহ@মসধরষ.পড়স

Comments

comments

Posted ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ জুলাই ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com