শনিবার ১লা এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

অসম্ভব এক মিশনের সফলতার গল্প

  |   মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ২০১৮

অসম্ভব এক মিশনের সফলতার গল্প

থাইল্যান্ডে অসম্ভব এক মিশন আজ সফল হলো। যে মিশনের প্রতিটি পরতে পরতে ছিল জীবননাশের শঙ্কা, পুনরুজ্জীবনের অসামান্য এক আকাঙ্ক্ষা। ভারীবর্ষণ; বর্ষণে তলিয়ে যাওয়া এক পাথুরে গুহার উঁচু এক ঢিবিতে অন্ধকারে প্রায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে যাওয়া ১৩টি প্রাণের এই শঙ্কা।

দেশটির উত্তরাঞ্চলের চিয়াং রাই প্রদেশের থ্যাম লুয়াং গুহা থেকে ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে ১৭ দিন পর পৃথিবীর নতুন আলোয় নিয়ে এলো একদল ডুবুরি; যার ফল হাওয়ায় মিশে গেল সব শঙ্কা। সবার মুখে নেমে এলো রাজ্য জয়ের হাসি। আর এই হাসি ফুটানোর নেপথ্যে লড়াকু-সাহসী দেশি-বিদেশি ডুবুরিরা কাজ করেছেন; তারা এখন শুধু দেশ নয় বরং দেশের বাইরেও বীরের খেতাবে ভূষিত হচ্ছেন।
কিন্তু এই অসম্ভব এক মিশন যে শেষ পর্যন্ত সবার মুখে হাসি ফুটাবে; সেরকম ভাবনা অনেকেই করতে পারেননি। চিয়াং রাই প্রদেশের হাসপাতালের সামনে শেষ অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছানোর অপেক্ষায় যখন প্রহর গুনছেন কিশোরদের পরিবারের স্বজনরা; তখন তাদের অনেকেই বলছেন, তারা এটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অন্যদিকে অনেকেই বলেছেন, তারা কখনোই আশা হারাননি।

পরিবারের সবার মুখে এখন হাসি ফুটছে। শত শত সাংবাদিক এই পরিবারের সদস্যদের হাসিমাখা মুখে দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করছেন। চিকিৎসকরা হাসপাতালে ভর্তি সব কিশোর ও তাদের কোচের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। গুহার অন্ধকার কুঠুরিতে দীর্ঘ ১৭ দিনের বন্দিদশা থেকে মুক্ত আলোয় ফিরে আসা এই কিশোরদের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন হাসপাতালের মনোচিকিৎসকরা।

‘উইল্ড বোর ফুটবল দলের এই সদস্যরা গুহায় ঢুকেছিলেন একটি দল হিসেবে। তারা বাঁচবে একটি দল হিসেবে। ৭২ ঘণ্টার অভাবনীয় এক অভিযানে উদ্ধারের পর তারা আবার একই দলে রয়েছেন। তবে জীর্ণ-কণ্টকাকীর্ণ পাথুরে গুহার পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের উদ্ধারে নিয়োজিত উদ্ধারকারীদের জন্য এয়ার ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে গিয়ে গত ৬ জুলাই মারা যান থাই নৌ-বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা সামান গুনান।

তার সঙ্গে থাকা সিলিন্ডারের অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সামান গুনানের স্ত্রী ওয়ালিপর্ন গুনান বলেন, ‘আমি সত্যিই তাকে ভালোবাসতাম। প্রত্যেক দিন কাজে যাওয়ার আগে পরস্পরকে বলতাম, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।’

‘আমি তোমাকে বলতে চাই, তুমি আমার হৃদয়ের বীর, সব সময় ছিলে এবং থাকবে।’

দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার সংকীর্ণ ও উঁচু-নিচু জলমগ্ন পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শুরু হয় রোববার। প্রথম দিকে থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, গুহায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ও বর্ষা মৌসুমে বর্ষণের কারণে তাদের এখনই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

চিয়াং রাই প্রদেশের গুহায় আটকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে ১৩ বিদেশি ডুবুরি ও থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর অভিজাত শাখা থাই নেভি সিলের পাঁচ সদস্য কাজ করেন। এছাড়া গুহার ভেতরে ও প্রবেশ পথে আরো অন্তত ৯০ জন ডুবুরি উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন। দু’দিনের অভিযানে মোট আট কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। সোমবার গুহার ভেতর থেকে চার কিশোরকে বের করে আনার পর দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। গুহার প্রবেশপথ থেকে চার কিলোমিটার দূরে আটকা থাকে শেষ চার কিশোর ও তাদের কোচ একাপল চ্যান্তাওং।

মঙ্গলবারের অভিযানে মোট ১৯ জন ডুবুরিকে গুহার ভেতরে উদ্ধার অভিযানে পাঠানো হয়। এক একজন কিশোরকে দু’জন করে ডুবুরি বাইরে আনার জন্য গুহার ভেতরে প্রবেশ করেন।

গত ২৩ জুন থেকে গুহায় আটকা ১২ কিশোর ও তাদের কোচ আটকা ছিলেন। ২ জুলাই ৯ দিনের এক অভিযানের পর দুই ব্রিটিশ ডুবুরি গুহার ভেতরে কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের খুঁজে বের করেন। গুহায় আটকা কিশোরদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছর।

মঙ্গলবার উইল্ড বোরের চার সদস্য ও কোচকে উদ্ধারের খবরে আনন্দ-উল্লাস-হর্ষধ্বনিতে মেতে উঠেছেন থাইরা। শহরের রাস্তায় রাস্তায় গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, চিৎকার করে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে তারা কিশোরদের উদ্ধারের আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন।

চিয়াং রাই প্রাদেশি অফিসের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা র‌্যাচাপল এনগ্যামগ্রাবুয়ান বলেন, ‘এটা আমরা জীবনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। এটা এমন এক ঘটনা; যা আমি সারাজীবন মনে রাখবো। যখন কিশোরদের সবাইকে উদ্ধারের খবর দেখলাম, তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। ‘আমি অনেক খুশি, খুবই খুশি যে থাই জনগণ একে অপরকে ভালোবাসে।’ দেশবিদেশ/ ১০ জুলাই ২০১৮/নেছার

Comments

comments

Posted ৯:৪৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ জুলাই ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com