বৃহস্পতিবার ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>
Advertisement Placeholder
শতভাগ স্বনির্ভর লবণ শিল্প চরম সংকটে

অবিক্রীত লাখ লাখ টন লবণ, আমদানির উদ্যোগে চাষিদের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   112 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

অবিক্রীত লাখ লাখ টন লবণ, আমদানির উদ্যোগে চাষিদের উদ্বেগ

শুরু হয়েছে নতুন মৌসুমে লবণ চাষের প্রস্তুতি। সূর্যের তাপে নোনাজল শুকিয়ে ‘সাদা সোনা’ উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের আশায় মাঠে নামছেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার প্রায় অর্ধলাখ চাষি।

কিন্তু গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখনো মাঠ ও গুদামে মজুত রয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ। এরই মধ্যে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে লবণ আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) দাবি করছে, সরকার চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। তবে চাষিরা বলছেন, আমদানির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ শিল্প চরম সংকটে পড়বে।

রেকর্ড উৎপাদন, তবু লোকসান: বিসিকের তথ্যমতে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় মোট ৬৯ হাজার একর জমিতে ৪১ হাজারের বেশি চাষি লবণ উৎপাদনে জড়িত। ২০২৪-২৫ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, অর্জন হয় ২২ লাখ ৫১ হাজার টন—যা ৬৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন।

তবে চাষিরা বলছেন, বাজারে ন্যায্যমূল্য না থাকায় তারা লোকসানে পড়েছেন।

ঈদগাঁওয়ের লবণচাষি রিদুয়ানুল হক জানান, “বর্তমানে প্রতি মণ লবণের দাম ১৮০-২০০ টাকা, অথচ উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৫০ টাকার বেশি। বিক্রির আয় দিয়ে খরচও উঠছে না।”

চাষিদের আন্দোলন ও দাবি: সম্প্রতি ‘লবণ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ’ মানববন্ধন করে এবং প্রতীকীভাবে উৎপাদিত লবণ সড়কে ফেলে প্রতিবাদ জানায়। তাদের দাবি—
বিদেশি লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে,লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে, দ্রুত জাতীয় লবণ বোর্ড গঠন করে শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।
সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, “দেশে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হলেও চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত। ব্যাংক ঋণের অভাব ও  মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে আমরা দিশেহারা।”বাংলাদেশ সল্টেড অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘নভেম্বরেই শুরু হবে নতুন মৌসুমের লবণ উৎপাদন। অথচ এ অবস্থায় এখনো মাঠ পর্যায়ে গর্ত ও গুদামে চাষিদের কাছে ৮-১০ লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুত রয়েছে। বাজারে দাম অত্যন্ত কম হওয়ায় চাষিরা লবণ বিক্রি করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে যদি সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে লবণ আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে দেশের লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’

আব্দুল শুক্কুরের অভিযোগ, ঢাকায় কিছু অসাধু লবণ আমদানিকারক রয়েছেন, যারা কক্সবাজারের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিসিককে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এসব ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সচিবালয়ে বিভ্রান্তিকর জরিপ উপস্থাপন করে লবণ আমদানির অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বিসিক যা বলেছেন: বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “বর্তমানে মাঠে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুত আছে। কেউ কেউ ৮ু১০ লাখ টনের কথা বলছেন, তবে আমাদের তথ্য অনুযায়ী সেটি সঠিক নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমদানির সিদ্ধান্ত জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের হাতে। সরকার চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট এবং আমদানি হলে যাতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।”

শিল্পের টিকে থাকার প্রশ্ন: বাংলাদেশ সল্টেড অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল শুক্কুর বলেন, “এ মুহূর্তে আমদানি অনুমোদন দেওয়া হলে দেশের লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।”

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “লবণ শিল্প শুধু একটি অর্থনৈতিক খাত নয়, এটি উপকূলীয় মানুষের জীবিকার মূল ভিত্তি। এই শিল্প টিকিয়ে না রাখতে পারলে উপকূলের হাজারো পরিবার বিপদে পড়বে।”

দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও লবণ আমদানির উদ্যোগ প্রশ্ন তুলেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। চাষিদের আশঙ্কা, যদি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে বিদেশি লবণ আসে, তবে দেশের শতভাগ স্বনির্ভর এই শিল্প চরম সংকটে পড়বে।

ডিবিএন/জেইউ।

Facebook Comments Box

Comments

comments

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম

যোগাযোগ

প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত

মোবাইল : ০৩৪১-৬৪১৮৮। বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন 01870-646060

ই-মেইল: ajkerdeshbidesh@yahoo.com